Advertisment

সীমান্ত জেলা মুর্শিদাবাদে বেআইনি মাদকের হদিশে ড্রোনের সাহায্য

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে , মূলত পদ্মা চর এলাকায় এই চাষ চলে। এই এলাকার রাস্তাঘাট অতীব দুর্গম। ফলে জেলা পুলিশ ও আবগারি দফতর ওই সমস্ত এলাকায়  পুলিশি নজরদারি ছাড়াও এই ড্রোনকেই এবার হাতিয়ার করেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পোস্তর হদিশে ড্রোন

চোখ তখন সকলের আকাশের দিকে। প্রায় কোনও রকম আওয়াজ ছাড়াই চার দিকে পাখা লাগানো এক আশ্চর্যদর্শন উড়ন্ত যান খোলা আকাশের  এমাথা থেকে ওমাথা টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। খবর পেয়েই সন্দেহজনক ওই বস্তুটি দেখতে হাজির সীমান্তের লালগোলা, ভগবানগোলা, রানিতলা, শক্তিপুর, কুলগাছি, রেজিনগর এলাকার  ছোট থেকে বড় সকলেই।

Advertisment

বেআইনি মাদক তৈরির অন্যতম কাঁচা মাল পোস্ত। বেআইনি ভাবে পোস্ত চাষ ব্যাপক হারে চলে সীমান্তজেলা মুর্শিদাবাদে। গত কয়েক মাস ধরে এই পোস্ত চাষ বন্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে প্রশাসন। নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো, সিআইডি, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, কৃষি দফতর, শুল্ক দফতর ও পুলিশ যৌথ ভাবে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। শুরু হয়েছে ড্রোন মারফৎ নজরদারি। সেদিনের অজানা উড়ন্ত বস্তুটি ছিল তেমনই একটি ড্রোন।

আরও পড়ুন, সাথীকে খোলা আকাশ দিতে চান খুনের আসামী বারুইপুরের বন্দি শংকর

মুর্শিদাবাদ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অংশুমান সাহা বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের একাধিক দফতর একত্রিত হয়ে মাদকের কারবার মুর্শিদাবাদ থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে সক্রিয় হয়েছি।’’

শুধু রাজ্যের ক্ষেত্রেই নয়, মাদক কারবারে গোটা দেশ জুড়েই মাথাব্যথার অন্যতম কারণ মুর্শিদাবাদ। সম্প্রতি মাদক কারবারে যুক্ত এমন অনেককেই পাকড়াও করেছে পুলিশ ও প্রশাসন, যারা বিভিন্ন সময়ে কারবারের চাঁই ছিল। তাতে মাদক ব্যবসার রমরমা এ অঞ্চলে কিছুটা কমেছে বটে, কিন্তু কারবারিদের একাংশ পুলিশকে ফাঁকি দেওয়ার নানা চেষ্টা করেই চলেছে।

২০০৭-০৮ সাল থেকে এই জেলায় ক্রমশ বাড়তে শুরু করে পোস্ত চাষের হিড়িক।  জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গুলিতে চাষের জমিতে মাঠের পর মাঠ জুড়ে শুরু হয় বেআইনি পোস্ত চাষ। সেই সময়ে সাধারণ এক ফসলী জমিও  বিঘে প্রতি ২০-৩০  হাজার টাকায় লিজ নিয়ে চলত এই পোস্ত চাষ। অনেকে বাড়তি উপার্জনের আশায় নিজের জমিতে দেদার চাষ করত পোস্ত। প্রশাসনের তরফ থেকে গ্রামবাসীদের নিয়ে সভার পর সভা করে বেআইনী পোস্ত চাষের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জমি থেকে কুঁড়ি সমেত পোস্ত গাছ উপড়েও দেওয়া হয়।

প্রায় এক যুগ পরে এবার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সীমান্তে মাদক কারবার তথা পোস্ত চাষ বন্ধে কোমর বেঁধে নেমেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে , মূলত পদ্মা চর এলাকায় এই চাষ চলে। এই এলাকার রাস্তাঘাট অতীব দুর্গম। ফলে জেলা পুলিশ ও আবগারি দফতর ওই সমস্ত এলাকায়  পুলিশি নজরদারি ছাড়াও এই ড্রোনকেই এবার হাতিয়ার করেছে। এর ফলে ১০-১২ কিমি দূরত্বের দুর্গম চর এলাকায় পোস্ত চাষ চিহ্নিত করা গিয়েছে।

এই এলাকাগুলিতে পায়ে হেঁটে ছাড়া পৌঁছানোর আর কোনও উপায় নেই, সেই সুযোগ নিয়ে হরদম পোস্ত চাষ চলছে। জেলা প্রশাসনের সমীক্ষায় জানা গিয়েছে,  লালগোলা, ভগবানগোলা, রানিতলা, রানিনগরের মতন এলাকায় পোস্তচাষের বাড়বাড়ন্ত। সেখানে মূলত  পোস্ত ফলের আঠা থেকে  অন্যান্য রাসায়নিক মিশিয়ে হেরোইন, ব্রাউন সুগার ইত্যাদি মাদক দ্রব্য তৈরি করা হয়।

এই সমস্ত মাদকের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সরবরাহ বন্ধ করতে ইতিমধ্যে জেলার ৩৫০ একরেরও বেশি জমির পোস্ত ধ্বংস করা গিয়েছে।

তবে বিঘের পর বিঘে বিভিন্ন সবজির চাষের মধ্যে কোথায় পোস্ত চাষ হচ্ছে তা বোঝা দুষ্কর। সেই আবডাল খুলে দিতে সাহায্য করছে ড্রোন। মাটি থেকে ১৫ ফুট অবধি উঠে রিমোটের সাহায্যে বিভিন্ন দিকে গিয়ে তুলে আনছে ছবি।

মিনিট বিশেক বাদে ফের যখন ড্রোন ফিরল অনেক অফিসাররাই ঝুঁকে পড়ছেন নিচে। এই বুুঝি মিলল পোস্ত গাাছের হদিশ!

Advertisment