অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শনিবার ভর্তি করা হল হাসপাতালে। তাঁর অক্সিজেনের মাত্রা ৭০-এর নীচে নেমে গিয়েছিল। কমে গিয়ছিল পটাশিয়ামের মাত্রাও। এদিন সকাল ১১টা থেকেই তাঁর সমস্যা শুরু হয়। সেই কারণেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ৫১৬ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অবস্থা স্থিতিশীল বলেই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে।
চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী, ধ্রুব ভট্টাচার্য, সৌতিক পণ্ডা, সুস্মিতা দেবনাথ, আশিস পাত্র, অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায়, সপ্তর্ষি বসু ও সরোজ মণ্ডলের মত পালমোনোলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার, মেডিসিন-সহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে আট সদস্যের এক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এই মেডিক্যাল টিমই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেখভাল করছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারে স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই চিকিৎসা করছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সি-প্যাপ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
তাঁকে হাসপাতালে গিয়ে দেখে এসেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপাল শনিবার সংস্কৃত কলেজের অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেখানে তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অসুস্থতার খবর পান। তারপর চলে যান হাসপাতালে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখার পর রাজ্যপাল জানান, দক্ষ চিকিৎসকরা তাঁর দেখভাল করছেন। আশা করা যায়, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। সিপিএমের তরফে রবীন দেবও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অক্সিজেনের মাত্রা বর্তমানে স্বাভাবিকের পথে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দিকে। হাসপাতালের তরফে নিয়মিত মেডিক্যাল বুলেটিনে যাবতীয় বিষয়গুলো জানানো হবে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে টুইট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
টুইট করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও।
দীর্ঘদিন ধরেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ। বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। মধ্যে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। শ্বাসকষ্ট, সিওপিডিও এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তারপর বাড়িতে ফিরে এসেও চলেছে চিকিৎসা। এদিন তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটার পর পরিবারের লোকজন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে খবর দেন। দেখার পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সাংবাদিকদের জানান, গত কয়েকদিন ধরেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তাঁরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে।
তারপরই হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে এদিন পাম এভিনিউয়ের বাড়ি থেকে বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ ক্রিটিক্যাল কেয়ারের অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। অ্যাম্বুল্যান্সে ছিলেন সপ্তর্ষি বসু-সহ দু'জন চিকিৎসকও। এরপর গ্রিন করিডরে অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে আনা হয় দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে।
আরও পড়ুন- ‘বুঝিয়ে দেব’, দল পদক্ষেপ করতেই বড় তোপ তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের!
বাড়িতে প্রতিদিনই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক পরিস্থিতির দিকে বিশেষ নজর রাখা হয়। এদিন সেভাবেই তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া ধরা পড়ে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই হাসপাতালে যেতে অথবা হাসপাতালে থাকতে খুব বেশি আগ্রহ দেখান না। বরং, হাসপাতালের চেয়ে বাড়ির পরিবেশই তাঁর কাছে বেশি স্বচ্ছন্দের। সেই কারণেই বাড়িতে তাঁর যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন দলের কাজকর্মে সরাসরি যোগদান করতে পারেননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তার মধ্যেই সহায়কের সাহায্যে চলছিল সাহিত্যপ্রেমী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর লেখালেখি-সহ অন্যান্য কাজকর্ম। দলের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা এবং তাঁর দলগত মতাদর্শও সেই সব লেখালেখির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।