করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রায় দু বছর ধরে বন্ধ স্কুল কলেজ সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত বছর নভেম্বরে কয়েক দিনের জন্য স্কুল চালু হলেও ওমিক্রন তাণ্ডবে ফের বন্ধ হয়ে যায় স্কুল কলেজ সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এদিকে ওমিক্রন দাপট কিছুটা কমতেই আগামীকাল থেকেই খুলতে চলেছে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হতে চলেছে ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’। অনেক শিক্ষার্থীর জন্য এটি উত্তেজনাপূর্ণও বটে। তবে, কিছু কিছু শিশুর জন্য বিষয়টি আবার উৎকণ্ঠা ও ভয়েরও সৃষ্টি করতে পারে এমনটাই মনে করছেন শিশুমনরোগ বিশেষজ্ঞরা। এমন সময় আপনাকেই আপনার সন্তানকে ভয়-ভীতি কাটাতে এগিয়ে আসতে হবে দাওয়াই দিয়েছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল চৌধুরী।
• আপনার প্রথম দায়িত্ব, আপনার সন্তান যেন স্কুলে স্বাছন্দ্যে ফিরতে পারে সেই ব্যাপারে তাকে উৎসাহিত করা।
• শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময়ই নয়, এমনকি সাধারণ সময়েও স্কুল শুরু করা বা নতুন শিক্ষা বছর শুরু করা শিশুদের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। যে বিষয়টা আপনার সন্তানকে উদ্বিগ্ন করতে পারে সে বিষয়ে খোলাখুলি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তার মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনতে পারেন। এছাড়াও উদ্বিগ্ন হওয়াটা তার জন্য যে স্বাভাবিক, সে বিষয়টি তাকে জানাতে পারেন।
• স্কুলে থাকাকালীন উপস্থিত বন্ধুদের এবং শিক্ষকদের থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকার বিষয়টিকে শিশুরা কঠিন বলে মনে করতে পারে। একত্রে না থেকেও সংযুক্ত থাকার বিভিন্ন উপায় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে আপনি শিশুদেরকে উৎসাহিত করতে পারেন।
• শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সুস্থ রাখতে সহায়তা করার জন্যই যে নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলি গৃহীত হয়েছে তা সম্পর্কে শিশুদেরকে আশ্বস্ত করুন। এছাড়াও শিশুদেরকে মনে করিয়ে দিন যে, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় কনুই দিয়ে ঢেকে রাখার মাধ্যমে তারা জীবাণুর বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
• স্কুলের ইতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে শিশুদের মনে করিয়ে দিন। তাদেরকে মনে করিয়ে দিন যে, স্কুলে গেলে তারা তাদের বন্ধু এবং শিক্ষকদের দেখতে পাবে নতুন নতুন নানা বিষয় শিখতে পারবে। সর্বোপরি সেটাই তাদের জগত এটা আপনার সন্তানকে মনে করিয়ে দিন।
স্কুলে কীভাবে সুরক্ষিত থাকতে হবে আপনার সন্তানকে-
• কোভিড -১৯ এবং অন্যান্য রোগ থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখার অন্যতম সেরা উপায় হল নিয়মিত হাত ধোয়াকে উৎসাহিত করা। সেই সঙ্গে ব্যাগে এক্সট্রা মাস্ক, স্যানিটাইজার দিয়ে রাখতে ভুলবেন না।
• কনুই দিয়ে কীভাবে কাশি বা হাঁচি ঢেকে রাখা যায়, সে বিষয়টি আপনি আপনার সন্তানকে দেখাতে পারেন। এছাড়াও, তারা যদি জ্বর অনুভব করে, তাদের যদি কাশি হয় বা শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বলে তারা মনে করতে শুরু করে, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আপনাকে অবশ্যই বলতে বলুন।
•শিশুদের কিছু বোঝানোর সময় শান্ত এবং সক্রিয় হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তারা কেমন করে সব সামলাচ্ছে তা তাদের মুখ থেকেই শুনুন। তাদের আবেগ নিয়মিত হেরফের হবে এবং সেটাও যে ঠিক আছে, সে বিষয়টি আপনাকে তাদেরকে আশ্বস্ত করতে হবে।
• স্কুল পুনরায় শুরু করার সময় আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তার শিক্ষণ দক্ষতা যাচাই করার পাশাপাশি তার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের লক্ষণগুলোর দিকেও নজর রাখা উচিত।
• আপনার সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কোভিড-১৯ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিষয়টি যে একেবারে স্বাভাবিক এবং মাঝে মাঝে সে ভারাক্রান্ত বোধ করতে পারে এবং এগুলো অস্বাভাবিক কিছু না সে বিষয়টি তাদেরকে বোঝানো জরুরি। যখনই কোন সন্দেহ হবে, তখন সহানুভূতি এবং সমর্থনই হচ্ছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ। প্রয়োজনে কাউন্সলিনিংও করতে হতে পারে।
আপনাকে নিজেকেও স্ট্রেস মুক্ত থাকতে হবে-
আপনার সন্তানকে মানসিক ভাবে দৃঢ় করার আগে আপনাকে নিজেকেও মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ থাকতে হবে। করোনা ভাইরাস আমাদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।
মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগা মানুষদের প্রথমেই উচিৎ নিজেই নিজেকে দুশ্চিন্তা মুক্ত করার চেষ্টা করা। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব সাইক্রিয়াট্রিস্টসের পরামর্শ হচ্ছে, নিজেকে নিজে সাহায্য করার কিছু কৌশল আছে, প্রথমে সেটাই চেষ্টা করা উচিৎ।
• কোন বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলা।
• কোন সেলফ হেলপ গ্রুপ বা অনলাইন সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দেওয...
• রিল্যাক্সেশন বা শারীরিক-মানসিক শিথিলকরণের কৌশল শেখা।
• যোগ ব্যায়াম, শরীরচর্চা, বই পড়া এবং গান শোনা। এগুলো খুব সহায়ক হতে পারে।