বালি তোলার বখরা নিয়ে ঝামেলার জেরেই ঘটে গিয়েছে বগটুইকাণ্ড। তাতেও নিস্তার নেই। অনবরত বালি বোঝাই গাড়ি থেকে তোলা আদায় চলছেই। অজানা নয় প্রশাসনেরও। যার জেরেই টোল আদায় সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নড়ে চড়ে বসে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ। শুরু হয়েছে জেলার কোথায় কোথায় বালির গাড়ি থেকে টোল আদায় চলছে সেই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ। এমনকী জেলাপরিষদের এক্সিকিউটিভ অফিসার জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির এক্সিকিউটিভ অফিসারকে চিঠি পাঠিয়ে সড়ক পথে কোথায় কোথায় বালির গাড়ি থেকে 'টোল আদায়' চলছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্যও চেয়ে পাঠিয়েছে। তবে এত কিছুর পরেও জেলায় বালির গাড়ি থেকে অনৈতিক ভাবে টোল আদায়ের অভিযোগ উঠছেই।
ট্রাক ও ডাম্পার চালকরা দাবি করেছেন, বালির গাড়ি জামালপুরের যে সব সড়ক পথ দিয়ে যাতায়াত করে তার কোনটা পূর্ত দফতর আবার কোনটা জেলাপরিষদের অধীনে রয়েছে। তারাই রাস্তা গুলির রক্ষণাবেক্ষণ করে। অথচ ওইসব পথ দিয়ে চলাচল করা বালির গাড়ির চালকদের জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির নামে ছাপানো বিল ধরিয়ে দিয়ে মোটা টাকা 'টোল' আদায় করা হচ্ছে। ওই বিলে আবার বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে টোল আদায়কারী এজেন্ট সজল সাঁতরার নামও।
চালকরা এও জানিয়েছেন, সব চালক জামালপুরের বালি খাদান থেকেই ট্রাক, লরি কিংবা ডাম্পারে বালি লোড করেন এমনটা নয়। বহু চালক রায়না ,খণ্ডঘোষ কিংবা মাধবডিহি থানা এলাকার খাদান থেকেও বালি গাড়িতে লোড করেন। বৈধ বালির চালান সঙ্গে নিয়ে ওইসব বালির গাড়ির চালকরা পূর্ত দফতরের অধীন সগড়াই -জামালপুর সড়ক-পথ দিয়ে এসে জামালপুরের হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুতে ওঠেন। সেই সেতু পার হবার পর কিছুটা পথ পেরিয়ে তাঁরা ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কলকাতায় চলে যান। হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতু পার হবার জন্য বালিবাহী ট্রাক, লরি কিংবা ডাম্পার চালকদের ১০০ টাকা ও ট্র্যাক্টর চালকদের ৪০ টাকা করে 'টোল' মেটাতে হয়। চালকদের অভিযোগ,একই পথে হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর টোল কাউন্টারের খানিকটা আগে কিছু মানুষ আরও একটি টোল কাউন্টার খুলে বসেছে। তাঁরা আবার দ্বিগুণ হারে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির নামে ছাপানো বিল ধরিয়ে দিয়ে প্রত্যেক বালিবাহী ট্রাক, লরি ও ডাম্পার থেকে ২০০ টাকা ও ট্র্যাক্টর থেকে ৭৫ টাকা টোল আদায় করছে।
অভিযোগের তালিকা আরও লম্বা। চালকরা জানিয়েছেন, পূর্ত দফতরের অধীন সগড়াই-জামালপুর সড়ক পথ ছাড়াও জেলাপরিষদের পরিচালনাধীনে থাকা জামালপুরের জ্যোৎশ্রীরাম ও জাড়গ্রাম অঞ্চলের সড়ক পথ ও কড়ালাঘাট-পলেমপুর সড়ক পথেও এজেন্ট সজল সাঁতরার লোকজন 'টোল' আদায় করছে। এমনকি ওই এজেন্টের লোকজন জামালপুরের সারাংপুর মোড়ে টোল খুলে বসে সেচ দফতরের অধীন দামোদরের বাঁধের রাস্তার ধার দিয়ে আসা বালির গাড়ি থেকেও মোটা টাকা 'টোল' আদায় করছে।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। তাঁদের প্রশ্ন, 'যে সড়ক পথ আদৌ জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে নয় সেই সড়ক পথ দিয়ে চলাচল করা বালির গাড়ি থেকে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির মনোনিত ওই এজেন্ট কিভাবে টোল তুলতে পারে?' টোল আদায়ের নামে বগটুইয়ের কায়দায় জামালপুরেও তোলা আদায় চলছে বলে দাবি করেছেন বিজেপি নেতা জীতেন্দ্রনাথ ডকাল।
জেলাপরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু কে এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'রাস্তায় টোল কাউন্টার খুলে বসে কে কোথায় টোল আদায় করছে সেটা সন্মন্ধে আমরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে। কে কার রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী গাড়ি থেকে টোল আদায় করছে তা জানার জন্যই এখন সার্ভে করা হচ্ছে। তার জন্যই জেলার সমস্ত পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির এক্সিকিউটিভ অফিসারেরকাছে টোল আদায় সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। কারণ যে রাস্তার জন্য টোল বাবদ টাকা তোলা হচ্ছে সেই রাস্তার কে মেরামতি করবে সেটা পরিস্কার হওয়া দরকার। শুধু টাকা তুলে নিয়ে চলে গেলেই তো আর হবে না। সার্ভে সম্পূর্ণ হয়ে যাবার পর এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে' পাশাপাশি তাঁর হুঁশিয়ারি , 'পূর্ত দফতর সম্পূর্ণ আলাদা সংস্থা। পঞ্চায়েত সমিতির নামে বিল ছাপিয়ে পূর্ত দফতর অধীন রাস্তা দিয়ে চলচলকারী যানবাহন থেকে টোল আদায় সম্পূর্ণ বেআইনি। পূর্ত দফতর জানতে পারলে যাঁরা টোল আদায় করছ’ তাঁদের জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বে।'
টোল আদায়ে নিযুক্ত জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির এজেন্ট সজল সাঁতরা বলেন , 'টোল আদায়ের ব্যাপারে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদ বা পূর্ত দফতরের ছাড়পত্র নিয়েছে কিনা তা আমি জানি না। পঞ্চায়েত সমিতি টোল কাউন্টার বসানোর জন্য যে যে পয়েন্ট নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সেই সেই পয়েন্ট থেকেই আমরা টোল আদায় করছি। তার মধ্যে কাড়ালা ছাড়াও সাহাপুর,পাচড়া ও মাধবপুর এলাকার পূর্ত দফতরের রাস্তাও রয়েছে।'
পূর্ত দফতর ও জেলাপরিষদের ছাড়পত্র নেওয়ার বিষয়ে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খাঁনও সুস্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি। তিনি শুধু বলেন, 'এই বিষয়ে আমারা জেলাপরিষদকে সবকিছু জানিয়েই কাজ করেছি।' বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানিয়েছেন, 'যাঁরা টোল তুলছে তাঁদের বালি ঘাট থেকেই টোল তোলার কথা বলা হয়েছে। ওঁরা যদি পূর্ত দফতর ও জেলাপরিষদের অধীন সড়ক পথের ধারে টোল কাউন্টার খুলে বসে বালির গাড়ি থেকে টোল আদায় করে থাকে তবে তা ঠিক কাজ করেনি। খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এমনটা করতে দেওয়া হবে না।'