শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে উত্তাল বাংলা। অবৈধদের বদলে নিয়োগের দাবিতে আদালত ও রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চাকরি প্রার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে ফের সামনে এল শিক্ষাক্ষেত্রে আরও এক দুর্নীতি। ভাড়া করা যুবককে দিয়ে স্কুল চালানোর অভিযোগ উঠলো স্কুলে না আসা শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার কোশিগ্রাম পঞ্চায়েতের শুনিয়া গ্রামের শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের। শিক্ষিকার এই কীর্তিতে
অভিভাবক মহলেও ব্যাপক ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। ঘটনা জানতে পেরে নড়ে চড়ে বসেছে স্কুল শিক্ষা দফতর।
কাটোয়ার শুনিয়া গ্রামের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটিতে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা হয়। খাতায় কলমে এই শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা হলেন অতসী বিশ্বাস। তিনি ২০০৭ সালে এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন। স্থানীয় বাসন্তী হাজরা, দিলীপ হাজরাদের অভিযোগ, 'মূল রাস্তা থেকে কয়েক কিলোমি্টার পথ পায়ে হেঁটে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়। সেই কারণে শিক্ষিকা অতসী বিশ্বাস মাসে মাত্র দু-এক দিন স্কুলে আসেন। বাকি দিনগুলিতে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে আসেন না। কিন্তু শিক্ষিকা অসুস্থতার দোহাই দিয়ে থাকেন। অতসীদেবীর বদলে স্কুল চালান ও পড়ুয়াদের পড়ান ফিরোজ মল্লিক নামে এক যুবক। অর্থের বিনিময়ে অতসী বিশ্বাস ফিরোজ ইসলামকেএই দায়িত্ব দিয়েছেন। অর্থাৎ ফিরোজ হলেন ওই স্কুলের ভারাটে শিক্ষক।'
এই ভাড়াটে শিক্ষকের স্কুলে ক্লাস নেওয়া ও ষ্কুলে খবরদারি করার বিষয়টি নিয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে অভিভাবকদের। তাঁরা কিছুতেই বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। অভিভাবকদের অনেকের আশঙ্ক, “চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের পড়ুয়াদের পড়ানোর মত যোগ্যতা হয়তো শিক্ষিকা অতসী বিশ্বাসের নেই। তাই তিনি নিজের জায়গায় ভাড়াটে শিক্ষক নিয়োগ করে মাইনে তুলছেন।' অতসী বিশ্বাস আদৌ বৈধ পথে স্কুল শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছিলেন কিনা, তার তদন্তও হওয়া দরকার বলে বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেছেন।
বিতর্ক দানা বাঁধতেই ভাড়াটে শিক্ষক ফিরোজ মল্লিক বলেন, 'গ্রামবাসীরা যে সব অভিযোগ তুলছেন তা সত্য নয়। শিক্ষিকা অতসী বিশ্বাস অসুস্থ। তাই তাঁকে আমি সাহায্য করি।' আর দিদিমণি অতসী বিশ্বাসের সাফাই, 'আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ বলেই ফিরোজকে সাহায্য করার জন্য বলেছি'।
এইসব যুক্তি মানতে রাজি নয় জেলা স্কুল (প্রাথমিক) দফতর। দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক পিনাকী ঘোষ বলেছেন, 'কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা তাঁদের অবর্তমানে অন্য কাউকে দিয়ে স্কুল চালাতে পারেন না। খোঁজ-খবর নিয়ে বিষয়টি দেখব।' অন্যদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান তথা মেমারির বিধায়ক মধুসুদন ভট্টাচার্য্য এই ঘটনার কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। মধুসুদন বাবু বলেন, 'কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা তাঁদের হয়ে পড়ানোর জন্য স্কুলে ভাড়াটে শিক্ষক নিয়োগ করতে পারেন না। এমনটা হয়ে থাকলে খুবই অন্যয় হচ্ছে। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। ঘটনা সত্য হলে যথাযথ পদক্ষেপ হবে।'