এসেছিলেন লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করতে। কিন্তু, সেসব দূর অস্ত্র। রাজ্য বিজেপির আসল হাল যে কী, তা সরেজমিনে দেখে গেলেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে ওঠে যে বিরক্ত মন্ত্রী দলীয় কর্মসূচি থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যান। ঘটনার সাক্ষী পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের জৌগ্রামের দোগাছিয়া অঞ্চলের বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
ঠিক কী ঘটেছিল? রবিবার রায়নার সুবলদহ গ্রামে দলীয় কর্মসূচি সেরে বিকেলে জামালপুরের জৌগ্রামের দোগাছিয়ায় পৌঁছন মন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী। সেখানে দলীয় কর্মসূচি শুরু হতে না-হতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সামনে বিজেপি নেতারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-অশান্তি শুরু করে দেন। কিছু সময়ের মধ্যে সেই অশান্তি চরমে ওঠে। মন্ত্রীর সামনেই ধাক্কাধাক্কি আর হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই গোষ্ঠীর বিজেপি নেতা ও কর্মীরা। এসব দেখে বিরক্ত হয়ে মন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী দলের নেতা ও কর্মীদের শান্ত হতে বলেন। তাতে কাজ না-হওয়ায় ১৫ মিনিটের মধ্যেই দলীয় বৈঠকে ইতি টেনে তিনি গাড়িতে চেপে অন্যত্র রওনা দেন।
এই ঘটনায় বিক্ষোভকারী বিজেপি কর্মীদের নেতা অভিজিৎ ঘোষাল ব্লকের কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে সেটিংয়ের অভিযোগ এনে সোচ্চার হয়েছেন। যাতে রীতিমতো হালে পানি পেয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা সিপিএম। এই ব্যাপারে পূর্ব বর্ধমান জেলা সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'অনেকদিন ধরেই আমরা বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে সেটিংয়ের কথা বলে আসছি। এখন বিজেপির নীচুতলার নেতা-কর্মীরাও একই কথা বলছেন।'
‘মেরা দেশ, মেরা মাটি’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে রবিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরের পাশাপাশি রায়নাতেও এসেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী। দুপুরে প্রথমে তিনি রায়না ২ ব্লকের সুবলদহ গ্রামে গিয়ে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর প্রতিকৃতিতে মালা পরিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে সেখানে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে মন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজ বাবদ পাওনা রাজ্যের বকেয়া অর্থ নিয়েও মন্ত্রী মুখ খোলেন।
আরও পড়ুন- বাড়িতে ১০ ঘণ্টা সিবিআই তল্লাশি, তদন্তকারীরা যেতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মেয়র ফিরহাদ
পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাংলার বকেয়া অর্থ না-দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। এনিয়ে রাজভবনের কাছেই ধরনা দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের নেতা-কর্মীরা। এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'এখানে কেন্দ্রের ১০০ দিন প্রকল্পের কাজ দেখতে একটি দল এসেছিল। তারা প্রকল্প খতিয়ে দেখতে এসে কিছু গোলমাল পেয়েছে। যে গোলমাল পাওয়া গিয়েছে, তার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যে কোনও কারণেই হোক, ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও রিপোর্ট আজও কেন্দ্রের কাছে জমা পড়েনি। তাই রাজ্য সরকারকে বকেয়া অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। ভারত সরকারের একটা নিয়ম আছে। যে টাকা দেওয়া হবে, তার হিসেব তো দিতেই হবে। হিসেব-রিপোর্ট দেবে না, তাহলে কী ভাবে টাকা দেওয়া হবে?'