/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/siliguri-bsf-Feature.jpg)
সীমান্তবর্তী রক্ষীদের কড়া নজরে জীবনযাপন গ্রামবাসীর। ছবি- সন্দীপ সরকারের
নিজভূমে পরবাসী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ফুলবাড়ি সীমান্তের চম্পতগছ গ্রামের বাসিন্দারা। স্বাধীনতার বাহাত্তর বছর পেরিয়ে গেলেও কার্যত পরাধীনতার শৃঙ্খলেই আবদ্ধ শিলিগুড়ি সংলগ্ন এই চম্পতগছ গ্রাম। দেশের সুরক্ষার স্বার্থে সীমান্তবর্তী এই গ্রামটিকে ঘিরে রাখা হয় কাঁটাতারের বেড়ায়। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স তথা বিএসএফ-এর নজরদারিতেই জীবনযাপন করেন চম্পতগছ গামের মানুষ।
আরও পড়ুন- শিলিগুড়ির হৃদয় জুড়ে রাখীতে ‘অভিনন্দন’
কেন স্বাধীনতাহীনতায় দিনযাপন করছে চম্পতগছ?
এপারে বাংলা ওপারেও বাংলা মধ্যিখানে চম্পকগছ। আর ঠিক এই কারণেই স্বাধীনতার ৭৩তম বছরেও কার্যত পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ফুলবাড়ি সীমান্তবর্তী এই গ্রাম। এই গ্রামে ঠিক সকাল ছ'টায় 'গেট' খুলে দেয় বিএসএফ, আবার সন্ধ্যার একটি নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ হয়ে যায় কাঁটাতার লাগোয়া চম্পতগছের সেই 'গেট'। প্রমাণপত্রে 'ভারতীয়' এই গ্রামবাসীদের গেটের বাইরে যেতে হলে নিজের পরিচয়পত্র জমা দিতে হয় বিএসএফ-এর হাতে। তবে নিয়মের এদিক ওদিক হলে, সেদিনের মতো প্রবেশাধিকার পেতে আলাদা করে নিতে হয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিশেষ অনুমতি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/siliguri-bsf-inline.jpg)
এই পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকেই এবার মুক্তি পেতে চাইছে চম্পতগছের মানুষ। এক সময়ে এই গ্রামে থাকা পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ, বর্তমানে সেই সংখ্যাটা এসে দাঁড়িয়েছে ৪০টি পরিবারে। কাঁটাতারের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে বেশিরভাগ পরিবারই জমিজমা বেচে চলে গিয়েছেন অন্যত্র। গ্রামের বাসিন্দা আনারুল হক বলেন, “স্বাধীন হয়েও পরাধীন হয়ে বাঁচতে হচ্ছে আমাদের। আত্মীয়স্বজন এলেও বিএসএফের অনুমতি নিতে হয়। তাই আত্মীয়স্বজনরা আসতে চায় না গ্রামে। এমনকী গ্রামে কোনও সমস্যা হলে পুলিশকেও অনুমতি নিয়ে গ্রামে ঢুকতে হয়। একবার গেট বন্ধ হয়ে গেলে বিপদে পড়লেও গ্রামের বাইরে বের হওয়া যায় না। বেরতে হলে কৈফিয়ত দিতে হয় বিএসএফ-কে। রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য। রাতের বেলায় সমস্যা হলে শুধুমাত্র সন্তানসম্ভবাদের ক্ষেত্রে বিএসএফ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেয়।”
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/siliguri-bsf-inline-1.jpg)
ভারতবর্ষে স্বাধীনতা এলেও, চম্পতগছ এখনও সেই সূর্যের আলো দেখেনি। শৃঙ্খলাবদ্ধ সেই সব জীবনের কথা প্রসঙ্গে গ্রামের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা অঞ্জু খাতুন বলেন, "মাঝে মধ্যেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা গ্রামে ঢুকে গবাদি পশু চুরি করে নিয়ে যায়। আমাদের কিছু করার থাকে না। এসবের থেকে মুক্তি চাই আমরা"। একই সুর শোনা গেল চম্পতগছ গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানের গলাতেও। পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল খালেক বলেন, "গ্রামবাসীদের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। কিন্তু নিরুপায় আমরা। দেশের সুরক্ষার স্বার্থে এই নিয়ম মানতে হচ্ছে গ্রামের মানুষজনকে। তবু অনেক চিঠিচাপাটি করে গ্রামের প্রবেশের গেট খোলা-বন্ধের সময় বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। আগের থেকে গ্রামে বাংলাদেশি চোরেদের উপদ্রবও কমেছে কিছুটা"।
তবে শুধু চম্পতগছই নয়, একই পরিস্থিতি সীমান্তের সন্নাসিকাটা অঞ্চলের সর্দার পাড়া, লালজোত, বাদলাগছেরও। বাদলাগছে একটা সময় জন বসতি থাকলেও বর্তমানে তা উঠে গিয়েছে। এখন সেখানে সেই চাষবাস করছেন বেশ কিছু ভারতীয় কৃষক। তবে আজ স্বাধীনতার দিনে স্বাধীন ভারতের বাসিন্দা হয়েও পরাধীনতার এই মেঘ সরিয়ে সূর্যের আলো পেতে চাইছেন চম্পতগছের মানুষ।
শিলিগুড়ির সব খবর পড়ুন এখানে