লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচাপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে। কিন্তু, বৃহস্পতিবার লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সম্পর্কিত অন্য মামলায় পুলিশের অতিসক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। বিচারপতি সিনহা রাজ্যের আইনজীবীর জানতে চান, 'একটা জিডি হয়েছে, তাতেই এত তৎপর পুলিশ? অন্য মামলার ক্ষেত্রে তো এত তৎপরতার দেখা যায় না?' ফাইল ডাউনলোড নিয়ে এদিন এজলাসেই ইডি ও রাজ্যের আইনজীবীদের মধ্যে তুলকালাম তর্কাতর্কি হয়।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেই একাধিকবার তা জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে এই কোম্পানির ডিরেক্টর তৃণমূল সাংসদের বাবা অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালতের নির্দেশ মত এ দিন ইডি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর সম্পত্তির হিসেবে জমা দিয়েছে আদালতে। সেই সঙ্গে ইডির দাবি, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সব ডিরেক্টরদের সম্মতির খতিয়ার জমা করেছে ইডি। কেন্দ্রীয় এজেন্সি জানিয়েছে, ওই সংস্থার টাকা সিনেমা জগতে ব্যবহার হয়েছে কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে। সেই তদন্তে আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। তবে সিনেমা জগতের একজনের নাম এই মামলায় জানিয়েছে ইডি।
এই মামলার শুনানির সময়ই উঠে আসে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটার থেকে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড প্রসঙ্গ। যা নিয়ে এদিন বাকযুদ্ধ বাঁধে বিচারপতি সিনহার এজলাসে।
একনজরে সেই তর্কাতর্কি-
ইডির অভিযোগ, তদন্তের নামে হয়রানি করছে কলকাতা পুলিশ।
যার পাল্টা রাজ্যের আইনজীবী শাশ্বত গোপাল মুখোপাধ্যায় বিচারপতি সিনহার এজলাসে জানান, নিজেদের কাজের বাইরে ইডি ১৬টা ফাইল ডাউনলোড করেছে। তাই আমাদের অনুসন্ধান করতে হচ্ছে। ইডি নিজেই ভুল স্বীকার করেছে। সাইবার শাখায় অভিযোগ দায়ের হয়। তার ভিত্তিতেই এই অনুসন্ধান। কখনও ইডির কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়নি। ইমেল করে তথ্য চাওয়া হয়েছে। কোন কোন অফিসার তদন্তে গিয়েছিলেন সেসব জানতে চাওয়া হয়েছে।
জবাবে ইডির আইনজীবী এজলাসে জানান- তদন্তের নামে অযথা হয়রানিই করা হচ্ছে। ইডির তদন্তে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সিইও। এটা জানানোর পর থেকেই হয়রানি শুরু। ফরেন্সিক রিপোর্টে এটা পরিস্কার যে ওই ১৬টি ফাইলে কলেজ সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া কিছু নেই। বারবার দুর্নীতির তদন্ত বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশকে দিয়ে এই কাজ করানোর চেষ্টা হচ্ছে। প্রভাবশালীদের মদতে এটা হচ্ছে।
পাল্টা কলকাতা পুলিশের তরফে আইনজীবীর দাবি- সিবিআই ইডির তদন্ত নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাচ্ছে না। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটারে কিছু ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছে। এই নিয়ে সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ সেটা খতিয়ে দেখতে চায়। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ নির্দেশ দিয়েছেন কারও বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। কিন্তু পুলিশ চাইলে মেল করে সিবিআই-ইডির কাছে এই ফাইলের বিষয়ে জানতে চাইতে পারে।
কী বললেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা?
উভরপক্ষের সওয়াল জবাবের পর বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, 'এই ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করা নিয়ে কলকাতা পুলিশ এত তৎপর কেন? একটা জিডি হয়েছে, তাতেই এত তৎপর পুলিশ? অন্য মামলার ক্ষেত্রে তো এত তৎপরতার দেখা যায় না।'
তখন রাজ্যের আইনজীবী বলেন, 'পুলিশ কিছু না করলে নিস্ক্রিয় বলে অপবাদ দেওয়া হয়।'