করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় নিজে জখম হয়েও অন্যদের বাঁচানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক জিয়াদুল মণ্ডল। রবিবার কালনার কপুরডাঙ্গার বাড়িতে ফিরে তিনি যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন তা জানলে শিউড়ে উঠবেন। একদিকে যখন উদ্ধারকাজ চলছিল উল্টোদিকে লুঠেরার দল সুযোগ বুঝে অবাধে চালিয়েছে লুঠতরাজ। দুর্ঘটনায় মৃত ও জখমদের ব্যাগ-ট্রলি ও অন্যান্য় জিনিস লুঠ করেছে তারা। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া কামরায় জখমদের আর্তনাদ জিয়াদুলকে এখনও যেন শোকাতুর করে রেখেছে।
কালনার জিয়াদুল মণ্ডল অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনেরই যাত্রী ছিলেন। তিনি ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যাচ্ছিলেন। কালনা মহকুমা হাসপাতালের বেডে শুয়ে জিয়াদুল জানিয়েছেন, ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর তাঁদের কামরাটা রেল লাইন থেকে অন্তত ৩০ ফুট দূরে ছিটকে গিয়ে পড়ে। ওই কামরায় থাকা ২৩ জনের মৃত্যু হয়। বরাতজোরে প্রাণে বেঁচে গেলেও ভালোই চোট পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ওই সময়ে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রেনের কামরা থেকে ভেসে আসা অন্য জখম যাত্রীদের আর্তনাদ শুনে তিনি মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারেননি। নিজের শরীরের আঘাত ভুলে তিনিও যাত্রীদের উদ্ধারে নেমে পড়েছিলেন।
আরও পড়ুন- ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’, ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ মমতার, তথ্যগোপনের অভিযোগ
জিয়াদুলের কথায়, ''জখম ট্রেনযাত্রীরা সকলেই তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। এমন আর্তনাদ করতে থাকা এক জখম যাত্রীর পা ধরে টেনে তাঁকে বের করছিলাম। ওই সময় ওই যাত্রীর কোমর ও পায়ের অংশ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যা দেখে আমি শিউরে উঠি।'' এছাড়াও দুর্ঘটনাস্থলে হওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতা কথাও শোনান জিয়াদুল মণ্ডল। তিনি বলেন, ''দুর্ঘটনার পর উদ্ধারের নামে এক শ্রেণির মানুষজন কার্যত লুটপাট চালাতে থাকে। আহত , মৃত কেউই ওই লুঠেরাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। জখমদের ব্যাগপত্র, টাকা-পয়সা সবই ওই লুঠেরারা গায়েব করে দেয়।''
জিয়াদুলকে বালেশ্বর থেকে ফিরিয়ে আনতে যাওয়া প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় জখম বা আহতদের সরকারি বাসে কোনও ভাড়া লাগবে না, এমনটা বলা হলেও তার উল্টোটাই ঘটেছে। ওড়িশা থেকে বাংলায় আসার পথে আহতদের কাছ থেকে মাঝ রাস্তায় ৪০০ টাকা দাবি করেন ওড়িশার বাসকর্মীরা। টাকা না দিলে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে বলেও ওই বাসকর্মীরা আহত যাত্রীদের হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে ভাড়া মিটিয়ে তবেই বাসে চড়ে ফিরতে পারেন জখম ও আহত যাত্রীরা।