বর্ধমানের প্রসিদ্ধ সীতাভোগ, মিহিদানা। নামটুকুই যথেষ্ট। শুনলেই জিভে জল আসতে বাধ্য। শতবর্ষ প্রাচীন এই দুই মিষ্টির খ্যাতি জগৎজোড়া। এবার সেই খ্যাতি আরও বড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিল ভারতীয় ডাক বিভাগ। অনেক টানাপোড়েন শেষে বছর চারেক আগেই জিআই স্বীকৃতি পেয়েছিল সীতাভোগ, মহিদানা। এবার ডাক বিভাগের খামেও ফুটে উঠবে বর্ধমানের এই দুই সুস্বাদু মিষ্টি।
শুক্রবারই বর্ধমানের ডাক অফিসে উদ্বোধন করা হয় সীতাভোগ, মিহিদানা সম্বলিত বিশেষ খামের কভারটি। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডাক বিভাগের সাউথ বেঙ্গল রিজিওনের পোস্ট মাস্টার জেনারেল শশী সালিনী কুজুর, ডাক বিভাগের বর্ধমান ডিভিশনের সুপাররিনটেন্ডেন্ট সৈয়দ ফ্রজ হায়দার নবি, বর্ধমানের হেড পোস্ট মাস্টার মধুসূদন রায় ও বর্ধমান সীতাভোগ অ্যান্ড মিহিদানা ট্রেডাস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রমোদ সিং। প্রতিটি খামের দাম ধার্য হয়েছে ২০ টাকা করে।
আরও পড়ুন- তুলোয় রুখবে সমুদ্র দূষণ, অভিনব আবিষ্কার বাঙালি বিজ্ঞানীর
স্বীকৃতিতে খুশি বর্ধমানের মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। বর্ধমান সীতাভোগ মিহিদানা ট্রেডাস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রমোধ কুমার সিং বলেন, "এই প্রথম কোন সরকারি সংস্থা বর্ধমানের মিষ্টান্নকে এই ভাবে প্রমোট করলো। এরফলে গোটা দেশ জুড়ে সীতাভোগ ও মিহিদানার নাম ছড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি গোটা দেশে বর্ধমানের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন সীতাভোগ, মিহিদানার চাহাদাও বাড়বে।" এর মধ্যেও অবশ্য আক্ষেপ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। কেন? প্রমোধ কুমার সিংয়ের কথায়, "২০১৭ সালে জিআই স্বীকৃতি মেলার পর ভেবেছিলেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এই দুই মিষ্টিকে আরও জনপ্রিয় করতে উদ্যোগী হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। কোন সরকারই এগিয়ে আসেনি। এবার অন্তত ডাক বিভাগ এগিয়ে আসায় আশা করছি ব্যবসার উন্নতি হবে।"
শহরের বিখ্যাত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, "ভারতীয় ডাক বিভাগ বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানাকে স্বীকৃতি দিল তাদের পোস্ট স্ট্যাম্পে। বর্ধমানবাসী হিসাবে গর্বিত। সীতাভোগ-মিহিদানার খ্যাতি আরও ছড়িয়ে পড়বে।"
সীতাভোগ, মিহিদানার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বর্ধমানের রাজ আমলের ইতিহাস। তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহাতাবকে ১৯০৪ সালে 'রাজাধীরাজ' উপাধি দেয় ইংরেজ সরকার। সেই উপলক্ষ্যে রাজপ্রাসাদে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমন্ত্রিত ছিলেন বাংলার তৎকালীন বড়লাট লর্ড কার্জন। বড়লাটকে খুশি করার জন্য মহারাজ সেই সময়কার বর্ধমানের নামজাদা মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগকে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য বিশেষ মিষ্টি প্রস্তুত করতে বরাত দেন। ভৈরবচন্দ্র নাগের হাতে তৈরি হয় মিহিদানা ও সীতাভোগ। জানা যায়, এই দুই মিষ্টির স্বাদ ও গন্ধে বড়লাট-সহ বাকি অতিথিরা মজে গিয়েছিলেন। এ দিন সেই সীতাভোগ, মিহিদানাকেই স্বীকৃতি জানাল ভারতীয় ডাক বিভাগ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন