সীমান্ত পাহারায় বিএসএফ। আর বিএসএফের ক্যাম্প পাহারায় ভরসা পীরবাবার মাজার। তার পাশেই মা-কালীর মন্দির। একেবারে বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ। কোচবিহারে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ফুলকা-ডাবরি বিএসএফের ৪৫ ব্যাটালিয়নের ক্যাম্পে এই পীরবাবার মাজারকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানান কাহিনী। ক্যাম্পে রয়েছে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে হাজারো নিষেধাজ্ঞা।
কোচবিহার শহর থেকে এই ক্যাম্পের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের বেশি। কাছেই তিন বিঘা করিডোর। আকর্ষণীয় সাজানো-গোছানো সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্প। এককথায় দৃষ্টিনন্দন। তবে আধা-সামরিক ক্যাম্প হিসেবে স্বাভাবিক নিয়মকানুনের বাইরেও নানা নিয়মের মধ্যে এঁদের থাকতে হয়। ক্যাম্পে কোনওরকম আমিষ খাবার খাওয়া দূরের কথা, প্রবেশও নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যাবতীয় নেশাদ্রব্যের ওপর। তার একটাই কারণ - ক্যাম্পের ভেতরে পীরবাবার মাজার। তার পাশেই কালী মন্দির, যদিও এই মদমাংস বর্জিত ভক্তিতে তাঁর মন ভরার কথা নয়।
ক্যাম্পে কর্তব্যরত এক জওয়ান জানান, মাছ, মাংস, ডিমসহ যাবতীয় আমিষ খাওয়া যায় না। এখানে মদ্যপান বা অন্য ধরনের যে কোনও নেশাও বারণ। তাই কর্তৃপক্ষ বেছে বেছে এই ক্যাম্পে এমন জওয়ানদের পোস্টিং দেন যাঁরা নিরামিষ খান ও নেশা করেন না। কারণ খাওয়া নিষেধ শুধু নয়, এমনকী বাইরে থেকে কেউ এসব খেয়ে ভিতরে প্রবেশ করাও নিষেধ। কিন্তু মজার বিষয় হলো, অনেকেই মনস্কামনা পূরণ হলে পীরবাবাকে মুরগী দান করে যান। যার ফলে ক্যাম্পের চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে অজস্র মুরগী!
পাশেই রয়েছে প্রায় ৮০টি পরিবারের বসতি। তাঁদের পেশা চাষাবাদ। পীরবাবার মাজারের উৎসবের অপেক্ষায় থাকেন এখানকার বাসিন্দারা। ক্যাম্পের বাইরে জমিতে চাষের কাজ করেন স্থানীয় বাসিন্দা সুনীল রায়। তিনি বলেন, "এখানে ভাদ্র মাসে পীরবাবার উৎসব হয়। হাজার-হাজার মানুষ ভীড় করেন। আমরা শুনেছি, পীরবাবার মাজারে বিএসএফের অফিসারদের থাকার ঘর তৈরি করা হয়েছিল। উদ্বোধনের পর ওই ঘরে থাকার সময় এক বিএসএফ অফিসার মারা গিয়েছিলেন। তারপর আরও একজন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। সেই থেকে কেউ আর অমান্য করে না পীরবাবাকে। মাজারের কাছেই যে কালী মন্দির, সেই মন্দিরে নিত্য কালীপুজোও হয়।"
ক্যাম্পের ওই জওয়ানও স্বীকার করে নিয়েছেন আধিকারিক ও জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনা। যে কারণেই মৃত্যু হোক, সেই থেকেই পীরবাবাকে মেনে চলেন বিএসএফের আধিকারিক থেকে জওয়ান, প্রত্যেকে। কথিত আছে, ক্যাম্পের গেটের কাছে সেন্ট্রি কর্তব্যরত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে, অজানা কোনও হাতের থাপ্পড় পর্যন্ত খেয়েছেন! এখন অবস্থা এমন, যে ক্যাম্পের গেটের সামনে সেন্ট্রি কখনও এদিক-ওদিক গেলেও পীরবাবার ভরসায় নিশ্চিন্ত থাকে ক্যাম্প। সীমান্তের নিশ্চিন্ততা অবশ্য অন্য গল্প।