বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের বিরুদ্ধে শুরু হল বিভাগীয় তদন্ত৷ অনুব্রত মণ্ডলের কদর্য ভাষায় দেওয়া গালিগালাজের অডিও ভাইরাল হল কিভাবে? সেটা নিয়েই শুরু হয়েছে তদন্ত। অনুব্রত সহ বোলপুরের একাংশের বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, আইসি বালি মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত, যে কোন ক্ষেত্রে টাকা চান৷ এছাড়া, কিভাবে অনুব্রত মন্ডলের ফোন কল রেকর্ড ভাইরাল হল, সেদিকটাও তদন্তের আওতায় এনে বাজেয়াপ্ত করা হয় আই সর মোবাইল। অন্যদিকে, এদিনও জামিনের আবেদন করলেন না অনুব্রত মণ্ডল। নীচুপট্টীর বাড়িতে নিজেকে গৃহবন্দী রাখলেন তিনি।
অনুব্রত মণ্ডল তিহারে থাকাকালীন কলকাতার ভবানীভবনে সিআইডি থেকে লিটন হালদারকে বোলপুর থানার আইসি করা হয়। ২ বছর আগে তাঁর বদলি হয়েছে সিআইডি থেকে।
প্রসঙ্গত, অনুব্রত মণ্ডল পরিচয় দিয়ে বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অডিও ক্লিপ ভাইরাল নিয়ে কয়েক দিন ধরেই বাজার গরম করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। হঠাৎই যে অনুব্রত ফোন করে আইসিকে গালিগালাজ করেছেন তা নয়, বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে আই সির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল কয়েক দিন ধরেই৷ অনুব্রত মণ্ডল অভিযোগ তুলেছিলেন আইসি বালি মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত, যে কেউ অভিযোগ দায়ের করতে গেলে টাকা চান আইসি৷ এমন বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে অনুব্রত অনুগামীরাও বোলপুর নাগরিক মঞ্চের নামে থানা ঘেরাও করেছিল৷
ঘেরাওয়ের দিন প্রচুর মানুষ জড়ো হয়েছিল৷ ওই দিনই অনুব্রতর সঙ্গে কথোপকথনের অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়৷ এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই দলের নির্দেশে লিখিত ক্ষমা চান অনুব্রত মণ্ডল। তবে সেই চিঠিতে অডিও ভাইরাল হওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেন অনুব্রত।
এই ঘটনার দিনই আই সি নিজে অনুব্রত মণ্ডলের নামে মামলা রুজু করেন। অর্থাৎ, আইসিকে গালিগালাজ করায় অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) ২২৪ (সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও কর্তব্যরত কর্মীকে হুমকি), ১৩২ (সরকারি কর্মচারীকে হেনস্থা), ৭৫ (শ্লীলতাহানি ও হেনস্থা) ও ৩৫১ (হুমকি) ধারায় মামলারুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তেমনই আইসি লিটন হালদারের বিরুদ্ধে শুরু হল বিভাগীয় তদন্ত। অনুব্রতর পাশাপাশি এবার কি বিপাকে পড়তে চলেছেন আইসি লিটনও?
ঘটনা প্রকাশ্যে আসার দিনই জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ অডিও ভাইরাল হবার তদন্তের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ঐ ঘটনার পাঁচ দিনের মধ্যেই বোলপুর থানার আই সি বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়ে গেল। বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, "সব বিষয়গুলি নিয়েই বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনই এর বেশি কিছু বলবো না।"
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন এত মানুষই আইসির বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত, শুধুই কি অনুব্রতর নির্দেশেই ঘেরাও-বিক্ষোভ? নাকি আইসির বিরুদ্ধে ওঠা তোলাবাজির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা? এই সমস্ত বিষয় নিয়ে এবার শুরু হল বিভাগীয় তদন্ত শুরু করলো পুলিশ।
শুধু তাই নয় কিভাবে দুজনের কথোপকথনের অডিও ক্লিপ বাইরে বের হল? গোপনীয়তার অধিকার আইন অনুযায়ী যা বে-আইনি৷ এই বিষয়টিও আইসির বিরুদ্ধে তদন্তের আওতায় রাখা হয়েছে৷
উল্লেখ্য, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে বলেছেন বোলপুর থানার আইসি এই অডিও ক্লিপ কাজল শেখকে দিয়েছিল। কাজল শেখ সেই কথোপকথন ভাইরাল করেছেন৷ এই বিস্ফোরক অভিযোগের পরে কাজল অবশ্য রামপুরহাটে বসে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, “এনিয়ে উনার সঙ্গে (শুভেন্দু অধিকারী) আদালতে দেখা হবে”।