সন্দেশখালিতে শিখ আইপিএস অফিসারকে খালিস্তানি মন্তব্যের জেরে উত্তাল শিখ সমাজ। রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিতর্ক এবার জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর খালিস্তানি মন্তব্যের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই মঙ্গলবার বিকেল থেকে কলকাতায় বিজেপির রাজ্য দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ। যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা না চাইছে বিজেপি, ততক্ষণ এই বিক্ষোভ অবস্থান চলবে বলে জানিয়েছেন শিখ সমাজের প্রতিনিধিরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তাঁদের।
এদিকে, এই ঘটনার রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শিখ সমাজের মানুষ প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। জাতীয় স্তরেও নিন্দার মুখে পড়েছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের শিখ আইপিএস অফিসার জসপ্রীত সিংয়ের চরিত্রহননের অভিযোগ তুলেছে অমৃতসরের শিরোমণি গুরদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সভাপতি হরজিন্দর সিং ধামি। তিনি একটি ভিডিওবার্তায় বলেছেন, যে নেতাদের এমন চিন্তাভাবনা সমাজকে বিষাক্ত করছে। তাঁদের মনে রাখা উচিত, এ দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সব থেকে বেশি আত্মত্যাগ করেছেন শিখরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সন্দেশখালি যাওয়ার পথে আটকানো হয় শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়কদের। তখনই পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান শুভেন্দুরা। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। অভিযোগ, এর মাঝেই কর্তব্যরত এক পাগড়িধারী আইপিএস পুলিশ আধিকারিককে ‘খালিস্তানি’ বলা হয় বিজেপির তরফে। জসপ্রীত সিং নামে ওই আইপিএস অফিসার তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, 'আমার মাথায় পাগড়ি বলে আমাকে খালিস্তানি বলছেন! আমার মাথায় পাগড়ি না থাকলে এটা বলতে পারতেন? আপনাদের ধর্ম নিয়ে আমি তো কিছু বলিনি, তাহলে আমার ধর্ম নিয়ে কেন কুকথা বলছেন?' প্রতিবাদে মুখর হন মুখ্যমন্ত্রী। একটি ভিডিও পোস্ট করে গর্জে ওঠেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে পুলিশ কর্তা জসপ্রিত সিং বারবার তাঁকে খালিস্তানি বলার জন্য প্রতিবাদ করছেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার মাথায় পাগড়ি আছে বলে আমায় খালিস্তানি বলছেন? আমাকে খালিস্তানি কেন বলছেন? আমি কি খালিস্তানি? এই মনোভাব আপনাদের?’ এমনকী, এ জন্য তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান। পরে ভিডিওতে দেখা গেছে, শুভেন্দু অধিকারীর তরফে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
পাল্টা শুভেন্দু অধিকারী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পাকিস্তান, খালিস্তান এসব আমাদের বলার প্রয়োজন হয় না। আমি বা আমার সাথীদের দ্বারা কাউকে ব্যক্তি আক্রমণ করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করি না। ওই অফিসার নম্বর বাড়াতে মমতাকে সঙ্গে নিয়ে এসব করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিম্নমানের রাজনীতি করেন। ওই অফিসারও নম্বর বাড়াতে অসত্য ঘটনা পরিবেশন করছেন।'
বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার বলেন, ‘বিরোধী দলনেতা একজন পুলিশ আধিকারিকদের দেখে তাঁর ধর্ম তুলে কটাক্ষ করছেন। এটা বরদাস্ত করা হবে না। এর বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’ পরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তরফেও একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে, শুভেন্দু অধিকারী ওই অফিসারকে খালিস্তানি বলে মন্তব্য করেছেন। পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে এক্স হ্যান্ডেলে।
গুরুদ্বার কমিটির সভাপতি ধামি অভিযোগ করেছেন যে, দেশে ‘হিংসার আবহ’ তৈরির চেষ্টা চলছে। তিনি আঙুল তুলেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেও। তাঁর কথায়, ‘‘এটা বড় প্রশ্ন যে, এই ধরনের লোকজন দেশে হিংসার আবহ তৈরির চেষ্টা করছে, কিন্তু সরকার চুপ রয়েছে। যাঁরা এ সব করছেন, তাঁদের কড়া শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে অন্য জায়গায় যাঁরা সৎ ভাবে নিজের কাজ করছেন, তাঁদের এ ধরনের হিংসার শিকার হতে না হয়।’’