Bengal Corona Cases: শেষ ১৬ অক্টোবর রাজ্যের দৈনিক করোনা সংক্রমণ ছিল ৫০০-র নীচে। দশমীর দিনে রাজ্যে সংক্রমিত ছিল ৪৫১ জন আর একাদশী অর্থাৎ ১৬ অক্টোবর সংক্রমিত হয়েছিলেন ৪৪৩ জন। তারপর যত দিন গড়িয়েছে লাফ দিয়ে বেড়েছে দৈনিক সংক্রমণ। শেষ তিনদিন একধাক্কায় অনেকটা বেড়ে করোনার দৈনিক সংক্রমণ ৮০০-র উপরে। আর এই পরিসংখ্যানে বড় অবদান কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনার। গত চার দিনে কলকাতার দৈনিক সংক্রমণ ২০০-র উপরেই। যাদের মধ্যে ৫০% ডবল টিকা নিয়েছেন। পিছিয়ে নেই গঙ্গার পশ্চিমপারের জেলা হাওড়াও। তথ্য এবং পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গিয়েছে, করোনার দুটি ডোজ যারা নিয়েছেন, তাঁরাই মোট দৈনিক আক্রান্তের ৬০%-এর বেশি সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
চিকিৎসকদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। কারণ ধীরে ধীরে টিকাদানের সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার বহরও বাড়াবে রাজ্য। সেই মর্মেই সিদ্ধান্ত হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। আর নমুনা পরীক্ষা যত বাড়বে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়বে সংক্রমণ। পুজো পরবর্তী সময়ে একটা সময় ছিল যখন সর্বাধিক ২০ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে একদিনে। যাদের মধ্যে অনেকে রয়েছে, যারা স্বেচ্ছায় নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বাড়িয়ে এখন ৪০ হাজার (২২ অক্টোবরের হিসেব) করা হয়েছে। ছুটি কাটাতে বাইরের রাজ্যে কিংবা রাজ্যের কোনও পর্যটনস্থলে যাওয়ার শর্ত মেনে।
গত ৫ দিনে রাজ্যে গড়ে ৪০ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছে, সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের পিছনে মূল অভিযুক্ত পুজোর আগেই ডবল ডোজ নিয়ে ফেলা জনগণ। দেহে করোনা টিকার দুটি ডোজ নিয়ে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন। টিকা নিলেও সংক্রমিত হতে পারেন একজন, এই বিজ্ঞান তাঁদের মনে ঢোকানো যায়নি। তাই পুজোর শপিং থেকে প্যান্ডেল পরিদর্শন থেকে হুল্লোড়, সবই চলেছে মাস্ক ছাড়া। পুজোর চারদিন কয়েকটি পুজো মণ্ডপ ঘুরে সেই ছবি উঠেও এসেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার ক্যামেরায়।
আর সেই মাস্কহীন ডবল ডোজ পেয়ে যাওয়া জনগণ উপসর্গহীন ভাবে দেদার ছড়িয়েছে সংক্রমণ। যেহেতু তাঁরা উপসর্গহীন তাই সেভাবে ধরা পড়েনি সংক্রমণের গভীরতা। কিন্তু যাদের উপসর্গ রয়েছে কিংবা করোনা টিকা এখনও পায়নি, তাঁদের মধ্যে যখন সংক্রমণ ধীরে ধীরে ছড়াবে তখন ভয়াবহ হবে পরিস্থিতি। কারণ সম্প্রতি চেন্নাইয়ের একটি সংস্থা জানিয়েছে, কলকাতা এবং বেঙ্গালুরুতে সংক্রমণের আর-ভ্যালু ১-র বেশি। অর্থাৎ একজন সংক্রমিত একাধিক ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে সক্রিয়।
তবে স্বাস্থ্য দফতরের একটি সুত্র বলছে, আগামি একমাসের মধ্যে চিত্র স্পষ্ট হবে। কারণ এখনও সংক্রমণের হার ৩-এর নীচে। একমাত্র ১৮ অক্টোবর সংক্রমণ হার ছুঁয়েছিল ৩% কিন্তু বাকি ছয় দিন কখন ২-২.৫% আবার কখন ২.৫-৩%-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে সংক্রমণের হার। একইভাবে কমেছে সুস্থতার হার। পুজো চলাকালীন একটা সময় সুস্থতার হার ৯৮.৩৩% হয়েছিল, সেই পরিসংখ্যান হঠাৎ কমে গিয়ে এখন সুস্থতার হার ৯৮.৩২%। এদিন সেটা আরও কমে ৯৮.৩১%। সেভাবে কমেনি সক্রিয় রোগীর সংখ্যাও। রাজ্যে এখন সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৭০০-র উপরেই। শনিবার আবার সবকিছুকে ছাপিয়ে সক্রিয় সংক্রমণ (৯৭৪) হাজার ছুঁইছুঁই। নমুনা পরীক্ষা বেড়ে ৪৩,১৫৯, সংক্রমণের হার ২.২৬%।
ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ রেখেই রাজ্যে সামান্য বাড়ল করোনার দৈনিক সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯০০-র উপরেই সংক্রমণ। একই থেকেছে দৈনিক মৃত্যু। একদিনে সংক্রমিত ৯৭৪ জন, মৃত ১২। সংক্রমণের হার শুক্রবারের তুলনায় সামান্য বেড়ে সামান্য কমে ২.২৬%। একদিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮০৮ জন, সুস্থতার হার ৯৮.৩১%। রাজ্যে এখন সক্রিয় সংক্রমণ ৭৭৩১।
এদিকে, সংক্রমণের নিরিখে নবান্নের উদ্বেগের কারণ সেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। উৎসব পরবর্তী সময়ে শহরের সংক্রমণ ক্রমেই ঊর্ধ্বগামী। কলকাতায় একদিনে সংক্রমিত ২৬৮, উত্তর ২৪ পরগনায় ১৪৭। এরপরেই রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি এবং হাওড়া। এদিকে, কলকাতায় করোনার দাপট বাড়ায় শহরের সব কোয়ারেন্টিন সেন্টার এবং দু’টি সেফ হোম খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে কলকাতা পুরনিগমের তরফে। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্যাংরা চম্পা মনি মাতৃ সদন সেফ ও হরেকৃষ্ণ শেঠ লেন সেফ হোম খোলা হচ্ছে। এছাড়া তপসিয়ার কোয়ারেন্টিন সেন্টারও চালু করা হচ্ছে। তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সেই কথা বিবেচনা করে হরেকৃষ্ণ শেঠ লেন সেফ হোমটি শিশু ও মায়েদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। কলকাতায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় পুরনিগমের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদের ছুটি বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে ফোনে কলকাতা পুরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলেছেন, ‘পুজোর জন্য বেশ কয়েকটি সেফ হোম বন্ধ ছিল। পুজো শেষে সেগুলিকে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে শহরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, অনেকেরই বাড়িতে থাকার অসুবিধা। ফলে পুরসভাও সেফ হোম, কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলিকে প্রস্তুত রাখছে। হঠাৎ যাতে চাপ না পড়ে তার জন্য এই উদ্যোগ।’
তিনি বলেছেন, টপরিসংখ্যান উদ্বেগের কারণ তো বটেই। পুজোর সময় মানুষ যেভাবে মাস্ক না পরে, কেউ কেউ আবার থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে দেদার ঘুরেছেন, তাতে বিপদের আঁচ ছিলই। তবে আক্রান্তদের বেশিরভাগ উপসর্গহীন হলেও তাঁদের বাড়িতে থাকতে হবে। কারণ উপসর্গহীনদের সংস্পর্শে এসে দুর্বল মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন