করোনা ভাইরাসের দৌলতে আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন এই দুই শব্দ আপাতত যে কোনো ভাষার শব্দভাণ্ডারে ঠাঁই করে নিয়েছে। তবে মহামারী নিয়ে গবেষণা করতে থাকা দুই ইতিহাসবিদ জানাচ্ছেন, ঊনবিংশ শতক এবং দ্বাদশ শতকের শুরুতে এই জোড়া শব্দ বন্ধনী কিন্তু মানুষের কাছে একেবারেই অপরিচিত ছিল এমনটা নয়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সুরঞ্জন দাস এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার দত্ত ব্রিটিশ যুগে ম্যালেরিয়া, কলেরা স্মল পক্সের প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। সেই সময়ে এই মহামারীর বিরুদ্ধে ব্রিটিশ শাসকরা কি ব্যবস্থা নেয়, তাও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।
তাঁদের গবেষণাতেই উঠে এসেছে একাধিক তথ্য। যেমন পিটিআইকে সুরঞ্জনবাবু বলছিলেন, উনিশ শতকেও সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে রুগীকে বলা হত আলাদা ঘরে থাকতে। ১৮১৭ থেকে ১৮৬৫ সালের মধ্যে দেড় কোটি মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়।
সরকারি এবং ব্রিটিশ সরকারের পুরোনো নথিপত্র, জার্নাল, সংবাদপত্র ঘেঁটে এই তথ্য জোগাড় করেছেন গবেষকরা। সেখানেই দেখা গিয়েছে, ১৮৬০ নাগাদ এবং উনিশ শতকের শুরুতে কলেরার প্রকোপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এর পরে ১৯১৯-১৯২৬ পর্যন্ত দাপট দেখায় স্মল পক্সের অতিমারী। জনসংখ্যা বহুলাংশে কমিয়ে দেয় এই জোড়া ঘটনা। সুরঞ্জনবাবু নথি ঘেঁটে দেখেছেন, ১৯১৯ সালে ৩৭ হাজার লোক স্মল পক্সে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
"সংক্রমিত রোগে অন্যদের রক্ষা করতে ব্রিটিশ সরকার ১৮৯৭ সালে মহামারী সংক্রান্ত আইন আনে। সেই আইনের বহু অংশ করোনা মোকাবিলায় তৈরি বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ আইনে যোগ করা হয়েছে।" বলছিলেন তিনি।
প্রখ্যাত এই ইতিহাসবিদ আরো জানালেন, "বর্তমানের মত অতীতেও উপসর্গবিহীন রোগীদের ক্ষেত্রে এসিমক্রোমাটিক শব্দটি ব্যবহার করা হত। ম্যালেরিয়ার মত রোগের ক্ষেত্রে যারা বাহকের কাজ করতেন, তাদের আলাদা করে চিহ্নিতকরণ করা হত।"
উনিশ শতকের শেষ এবং বিংশ শতকের শুরুতে যখন ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা হয়। তখন বহু মানুষ তা নিতে অস্বীকার করে। সিরিঞ্জের তরল দেহের মধ্যে ঢোকানোর তীব্র বিরোধিতা করে সেই সময়ের লোকজন। ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্রিটিশ সরকারের এবং স্থানীয় ভূমিকা মোটেই আশাব্যঞ্জক ছিল না। এমনটাই জানাচ্ছেন তিনি। খুব শীঘ্রই সুরঞ্জনবাবুর এই সব তথ্য বই আকারে প্রকাশ করা হবে।