scorecardresearch

রঙ খেলার মরশুমে মনে রাখতেই হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা

আবির তৈরির প্রক্রিয়া শেখানোর জন্য আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দল পাঠিয়েছিল, বললেন সিদ্ধার্থ দত্ত।

Herbal gulal Jadavpur university
২০০৮ সালে ভেষজ আবির তৈরিতে সক্ষম হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (ফোটো- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

Happy Holi 2019: সেটা ২০০৫ সালের কথা, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কথা বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশ বান্ধব আবির বানানোর কাজ শুরু করেন। তখন বাজার ছেয়ে আছে শস্তা রাসায়নিক আবিরে। সেসব আবির স্বাস্থ্যের পক্ষে ভয়ানক।

তখন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ছিলেন সিদ্ধার্থ দত্ত। বললেন, “রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে পরিবেশ বান্ধব হোলি উৎসব কী ভাবে করা যায় সে ব্যাপারে আমাদের অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে জানানো হয় এশিয়ার বৃহত্তম ফুল বাজার মল্লিক ঘাটে গঙ্গা দিয়ে বয়ে যাওয়া নষ্ট ফুলের কথাও।”

আবির তৈরির প্রক্রিয়া

এ ধরনের উদ্যোগ ভারতে প্রথম। তিন বছর ক্রমাগত চেষ্টা চালানোর পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৮ সালে ভেষজ আবির বানাতে সক্ষম হয় বলে জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ উপাচার্য।

এই পুরো প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন বিভাগীয় ডিন সিদ্ধার্থ দত্ত, অধ্যাপক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এবং অন্যান্য অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীরা। ফুল থেকে আবির তৈরির প্রাথমিক কাজ হয় বাগনানের পাইলট প্ল্য়ান্টে।

[bc_video video_id=”6016052923001″ account_id=”5798671093001″ player_id=”JvQ6j3xDb1″ embed=”in-page” padding_top=”56%” autoplay=”” min_width=”0px” max_width=”640px” width=”100%” height=”100%”]

বাজারে যে আবির পাওয়া যায়, পুষ্পা আবির তার মত নয়। এ আবিরের বেস হল ট্যালকম পাউডার, ফলে শরীরের ত্বকে অস্বস্তি হয় না। ফুল বাজার এবং গঙ্গা নদী থেকে নষ্ট ফুল সংগ্রহ করার পর সেগুলোকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয়। তার পর সেগুলোকে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় গরম জলে সেদ্ধ করা হয়। এর পর বিভিন্ন রঙ ও গন্ধের ট্যালকম পাউডারের সঙ্গে সেগুলোকে মেশানো হয়। একবার এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে যুঁই প্রভৃতি ফুলের প্রাকৃতিক গন্ধের সঙ্গে সেগুলো মেশানো হয়। তারপর ২৪ ঘণ্টা এই গোটা মিশ্রণটা ছায়ায় শুকোনো হয়।

সংগৃহীত ফুল প্রথমে টুকরো টুকরো করে কেটে নেওয়া হয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ রকমের আবির তৈরি হয়- সবুজ, কমলা, গোলাপি, হলুদ, বেগুনি এবং সাদা। এগুলো চৈরি হয় গাঁদা, চায়না রোজ, গোলাপ প্রভৃতি থেকে।

প্রাখমিক ভাবে যা সাড়া পড়েছিল, তা অত্যন্ত উৎসাহজনক। আবির তৈরির প্রক্রিয়া শেখানোর জন্য আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দল পাঠিয়েছিল, বললেন সিদ্ধার্থ দত্ত। প্রসঙ্গত ২০০৯ সালে তিনি হার্বাল ডাইয়ের পেটেন্ট পান। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আবির তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় বেশ কয়েকটি এনজিও কে।

বীরভূমে চলছে ভেষজ আবির তৈরির প্রশিক্ষণ

তবে ভেষজ আবির তৈরির খরচ অন্যান্য আবির তৈরির প্রায় দ্বিগুণ। যে কারণে এর খদ্দের ক্রমশ কমে এসেছে। এক কেজি রাসায়নিক আবির তৈরি করতে যেখানে খরচ পড়ে ১৫ টাকা, সেখানে ভেষজ আবির তৈরির খরচ ২৫ থেকে ৩০ টাকা প্রতি কিলো।

আর একটা ব্যাপারও রয়েছে। হোলি যেহেতু বছরে একবার আসে, সে কারণে যথাযথ পরিকাঠামো নেই। “আমরা বছরে ৫০ কিলো আবির বানানোর বরাত পাই, কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবের কারণে আমরা সে লক্ষ্য পূরণ করে উঠতে পারি না। তার চেয়েও বড় কথা, খরচের তফাতের জন্য আমরা রায়ায়নিক আবিরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারি না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন ছাত্র আস্থানা দত্ত বললেন, “আবিরটা খুবই ভালো, কিন্তু পাওয়া যায় খুব কম। এ প্রকল্পটা দারুণ, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের খারাপ ভূমিকার জন্য আবিরটা বাজারে পাওয়া যায় না। আমি যেখানে থাকি, সেই উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে মাত্র কয়েকটি দোকানেই এই আবির বিক্রি হয়।”

 

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Jadavpur university herbal gulal almost unavailable in market