যাদবপুরের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর উদ্ধার হওয়া ডায়রির পাতায় লেখা চিঠি-র উল্লেখ নিয়েই এখন একাধিক প্রশ্ন৷ ডিন অফ স্টুডেন্টসকে উদ্দেশ্য করে লেখা সেই চিঠিতে, ক্যাম্পাসের জনৈক 'রুদ্র দা'র কথা বলা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, সেই সিনিয়র নাকি হস্টেল নিয়ে ওই ছাত্রকে অযথা ভয় দেখিয়েছে৷ বলেছে, ওই হস্টেলে থাকলে দাদাদের ফাই-ফরমাশ খাটতে হয়, না খাটলে ছাত্রদের দোতলা-তিন তলা থেকে ঝাঁপ দিতে হয়৷ যে চিঠিটি সামনে এসেছে, তা আদৌ মৃত পড়ুয়া লিখেছিলেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷ জানা গিয়েছে, ওই চিঠিতে থাকা বয়ানের সঙ্গে বুধবার রাতে ডিন অফ স্টুডেন্টসের কাছে যাওয়া ফোনের বয়ানের মিল রয়েছে৷ যা নতুন করে জল্পনা বাড়াচ্ছে৷
ইতিমধ্যেই মৃত ছাত্রের বাবা অবশ্য জানিয়েছেন, ওই চিঠিতে থাকা হাতের লেখা তাঁর ছেলের নয়৷ তদন্তের মোড় ঘোরাতেই এই কারসাজি করেছেন অভিযুক্তেরা৷ এমনকি, চিঠির নীচে থাকা ছাত্রের স্বাক্ষর নিয়েও সন্দেহ রয়েছে৷ পুলিশের তরফে ওই ছাত্রের পুরনো খাতা বা হাতের লেখার নমুনা পরিবারের কাছ থেকে চেয়ে পাঠানো হয়েছের৷ সেই হাতের লেখা পেলে, ডায়েরিতে থাকা হাতের লেখার সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে৷ ফলে প্রশ্ন উঠছে চিঠি-তে লেখা ডাবল রাইটিং নিয়ে।
প্রশ্ন আরও একটি- গত শনিবারই মৃত ছাত্রের একটি ডায়েরি হস্টেলের ঘর থেকে পান তদন্তকারীরা৷ সেই ডায়েরিতে লেখা চিঠি ঘিরেই এবার নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা৷ দেখা গিয়েছে, সেই চিঠির গোটাটাই টানা এক ভাবে লেখা হলেও তারিখের জায়গায় ডাবল রাইটিং পাওয়া গিয়েছে৷ তারিখের জায়গায় লেখা রয়েছে ১০ আগস্ট৷ অভিযোগ, ৯ আগস্টের উপরে নতুন করে ১০ আগস্ট করা হয়েছে সেখানে৷ কিন্তু, গত ৯ অগাস্টই যাদবপুরের মেন হস্টেলের নীচে নগ্ন, রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ওই ছাত্রটিকে৷ পরের দিন ভোরেই মৃত্যু হয় তাঁর৷ এর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, যে ৯ অগাস্ট ঘটনা ঘটলে, চিঠির তারিখ কেন ১০ অগাস্ট করা হয়েছিল৷ তাহলে কি অভিযুক্ত ছাত্রেরাই তথ্যপ্রমাণ হেরফের করার চেষ্টা করেছিলেন?
কে এই 'রুদ্র'? বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশের দাবি অনুসারে- 'রুদ্র' সম্ভবত রুদ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত৷ কী জানাচ্ছেন রুদ্র নিজে? তাঁর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে সে থাকে না৷ থাকে ৫ কিলোমিটার দূরে নিজের বাড়িতে৷ রুদ্রর আরও দাবি যে, গত ৭ আগস্ট ওই ছাত্র যখন তাঁর বিভাগে এসেছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে ৩-৪ মিনিট কথা হয়েছিল তাঁর৷ মফসসল থেকে কলকাতায় পড়তে এসেছিলেন স্বপ্নদীপ। ফলে রুদ্র স্বপ্নদীপকে স্বাভাবিক ভাবেই সতর্ক এবং সাবধান করেছিলেন৷ বলেছিলেন, চেনা মানুষজনদের নিয়েই থাকতে৷ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেনম তিনি।