দুর্গাপুজোর পর আবারও মাতৃবন্দনায় সেজে উঠেছে আলোর শহর চন্দননগর। গঙ্গা তীরের এই শহরে প্রতিবছর জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমান। এবারেও তার কোন ব্যতিক্রম নেই। প্রতিমা থেকে মন্ডপ সজ্জা সেই সঙ্গে মায়াবী আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে গোটা শহর। আর তা দেখতেই কাতারে কাতারে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। মেতে ওঠেন আলোক-আনন্দে। তবে ধীরে ধীরে চন্দননগর পেরিয়ে মানকুণ্ডু -ভদ্রেশ্বরেও তাক লাগানো জগদ্ধাত্রী প্রতিমা ও মন্ডপ সজ্জা দেখেতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমান। প্রতিবছরই নিত্যনতুন আলোকসজ্জা দর্শনার্থীদের অবাক করে এবারও তার যেন কোন ব্যতিক্রম নেই। তবে যে প্রতিমা ও মণ্ডপ সজ্জা একেবারেই মিস করা যাবে না রইল তার তালিকা।
উত্তরাঞ্চল সার্বজনীন-বর্ষ ৫৭
উত্তরাঞ্চল সার্বজনীনের এবারের থিম ‘চাই না হতে উমা’। নারী নির্যাতন ও শিশুশ্রমের যন্ত্রণাকে তুলে ধরা হয়েছে পুজো ভাবনায়। নিরঞ্জন শোভাযাত্রায় থিম- ‘ইণ্ডিয়ান আর্মি’।
নিয়োগীবাগান সার্বজনীন
থাইল্যাণ্ডের মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মন্দির। মন্ডপ সজ্জায় ব্যবহৃত হয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের থালা, বাটি, চামচ। আলোকসজ্জার চমক ‘পরী’।
হেলাপুকুর সার্বজনীন
৫৪তম বর্ষে থিমের নাম উৎসব। সোনায় মোড়া প্রতিমা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সঙ্গে মায়াবী আলোকসজ্জা চমকে দেবে।
বোড় কালীতলা সার্বজনীন
৫৪ তম বর্ষে বিষয় ভাবনা ধামসা তালে মাতবে নগর, সাজবে তাই রানীর বাড়ি,২৩ রাতেও সাজবে রানী, চড়বে যখন আলোর গাড়ি। সঙ্গে থাকছে চোখধাঁধানো আলোকসজ্জা। প্রতিমার সাজের থিম ময়ূরপঙ্খী। শোভাযাত্রায় আলোকসজ্জায় থাকছে ব্রাজিলের সাম্বা।
বোড়াই চণ্ডীতলা জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি
চন্দ্রযান ৩ থিমে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। তার সঙ্গে মিল রেখেই ইসরোর জন্ম থেকে চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপন।
বারাসাত দক্ষিণ সার্বজনীন
৫৫ তম বর্ষে এবারের থিম মুক্ত বিহঙ্গ। নজরকাড়া সাবেকি সাজের প্রতিমা মন জুড়াবে।
দুর্গাপুজোর মতোই চতুর্থী থেকেই ভিড় শুরু হয়ে যাবে বলে আশা করছেন পুজো কমিটিগুলি। জগদ্ধাত্রী পুজো শুরুই হচ্ছে সপ্তাহের প্রথম দিন থেকে। সঙ্গে ভিড় নামবে বাইরে থেকে আসা মানুষজনেরও। গোটা সপ্তাহজুড়েই থাকবে আলোর রোশনাই আর প্রতিমা সৌন্দর্যের লড়াই। এছাড়া শোভাযাত্রা তো উপরি পাওনা। চন্দননগর বা মানকুণ্ড স্টেশন থেকে নেমেই আপনি পর পর দেখতে পাবেন অপূর্ব থিমের মণ্ডপ ও বিশালাকার জগদ্ধাত্রী প্রতিমা।
যারা প্রথমবারের জন্য চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা দর্শনে যাচ্ছেন তারা হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে অথবা বর্ধমান থেকে ট্রেনে মানকুন্ড স্টেশনে নেমেই স্টেশনরোড ধরে সোজা আসুন জ্যোতির মোড়ে। পথেই দেখুন মানকুন্ডু স্পোর্টিং ক্লাব, নতুনপাড়া, নিয়োগী বাগান, সার্কাস মাঠ, চারাবাগানের সর্বজনীন পুজো, গোপালবাগ, লিচুতলা, হালদারপাড়া, রথের সড়ক, বালক সংঘ আর জ্যোতির মোড়ে তেমাথার সবচেয়ে বড় রাণী মা।
ভদ্রেশ্বরের দিকে গেলে জ্যোতির মোড় থেকে ডানদিকে যেতে হবে। হাঁটা পথেই দেখুন ছুতোর পাড়া, অরবিন্দ সংঘ, বারাসাত ব্যানার্জি পাড়া, বারাসাত গেট, তেঁতুলতলার বিখ্যাত ও জাগ্রত ঠাকুর, চক্রবর্তী পাড়ার সুন্দর সুন্দর প্রতিমা, থিমের মণ্ডপসজ্জা। যেতে পারেন জ্যোতির মোড় থেকে সোজা গঙ্গার ধারের দিকে। সেখানে দেখতে পাবেন শিবমন্দিরের পুজো, গোন্দলপাড়া আরও বেশ কয়েকটি ছোট ছোট পুজো। এদিকেই দেখতে পাবেন অম্বিকা অ্যাথলেটিক্স ক্লাব, চারমন্দির তলা, কাছাড়িঘাট। আলোকসজ্জা মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনের পাশাপাশি বাগবাজার-বড়বাজার অঞ্চলে নামী-দামি রেস্তোরাঁ থেকে চলুক পেটপুজো।