ফরাসি ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগোর কালজয়ী উপন্যাস 'লা মিজারেবল' লেখা হয়েছিল জঁ ভ্যালজঁ নামে এক কুখ্যাত কয়েদির জেল জীবন ও তার পরবর্তি অবস্থা নিয়ে। ওই উপন্যাসে দেখানো হয়েছিল যে কয়েদি জেল পালিয়ে পরিচয় পাল্টে ভালো ভাবে বাঁচতে চেয়েছিলেন। উনিশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা এই উপন্যাস এর প্রতিচ্ছবি দেখা গেল একবিংশ শতাব্দীতে হুগলি জেলায়।
গণধর্ষণে অভিযুক্তের ১০ বছর সাজা কাটানোর পর সমাজের মূলস্রোতে ফেরার অদম্য ইচ্ছাকে মান্যতা দিলো জেলা প্রশাসন। ২০১১ সালে পোলবা থানার হালুসা-পাটনা গ্রামের বাসিন্দা বাপী হাঁসদা কুসঙ্গে পড়ে গণধর্ষণ মামলায় জড়িয়ে পড়ে। বিচারে সাজা হয় ১২ বছরের। হুগলি সংশোধনাগারে ঠাঁই হয় বাপীর। কিন্তু সংশোধনাগারে গিয়ে আমূল পরিবর্তন আসে জীবনে। তার ব্যবহার এবং জীবনযাত্রার জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদ থেকে বছর খানেক আগেই মুক্তি পান বাপী। তারপর থেকেই সমাজের মূলস্রোতে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি।
বাপীর পাশে এসে দাঁড়ান জেলা প্রবেশন অফিসার মনোজ কুমার রায়। মূলত তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় ঠিক হয় সুস্থ জীবনে ফিরতে অটো চালাবেন বাপী। বৃহস্পতিবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চুঁচুড়া রবীন্দ্র ভবনে জেলা আর-টি-ও-র পক্ষ থেকে বাপীর হাতে পাণ্ডুয়া এলাকার একটি রুটের পারমিট তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি অটো কেনার জন্য প্রধানমন্ত্রী মুদ্রাযোজনা স্কিমের মধ্য দিয়ে যাতে তিনি ঋণ পান তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন মনোজ কুমার রায়।
বাপী জানায়, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পোলবার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের থেকে তিনি পর্যাপ্ত ঋণ পেতে চলেছেন। কেমন লাগছে? বাপীর উত্তর, 'আমি সুস্থভাবে স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে চাই । আর এই সুযোগ আমায় করে দিয়েছেন মনোজ স্যার। তাঁর চরণে শতকোটি প্রণাম। একটু স্বচ্ছল হলেই তিনি বিয়ে করে সংসারী হবেন বলে জানান বছর ছত্তিশের যুবক।'