নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা এমন একটি পরিবারের গৃহকর্তা জয়প্রকাশ সাহা। বছর আটচল্লিশের এহেন এই ব্যক্তির বাড়িতেই রবিবার কোটি টাকারও বেশি উদ্ধার হয়েছে। গাজোলের এই ঘটনা ঘিরে গোটা মালদহ জেলায় জোর গুঞ্জন। এক সময় পুকুরে মাছ চাষের শ্রমিক হয়ে কাজ করতেন এই জয়প্রকাশ। তবে এখন তিনি নিজেই ৬-৭টি পুকুরের মালিক। এক-একটি পুকুরই ১৪ থেকে প্রায় ১৮ বিঘার মতো। দুই বোনের বিয়ে দিয়েছেন জয়প্রকাশ। মাস ছয়ে'ক আগেই পাকা বাড়িও তৈরি করেছেন। পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী চন্দ্রা গুপ্তা সাহা এবং দুই নাবালক ছেলে। দুই সন্তানই স্কুলে পড়ে। রবিবার গাজোলের ঘাকশোলের এই জয়প্রকাশ সাহার বাড়ি থেকেই ১ কোটি ৩৯ লক্ষ ৩ হাজার ৫০ টাকা উদ্ধার করেছে সিআইডি।
এত বিপুল পরিমাণ টাকা একটা সাধারণ মাছ বিক্রেতার বাড়িতে কীভাবে এল? তা নিয়েই সোমবার সকাল থেকে গাজোলের চায়ের দোকান থেকে পাড়ার আড্ডায় শুরু হয়েছে বিস্তর আলোচনা। সোমবার দুপুরে জয়প্রকাশ সাহাকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে মালদহ আদালতে আবেদন জানিয়েছে সিআইডি। রাজ্য তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়প্রকাশ সাহার মত এমন আরও তিনজনের সন্ধান শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের অনুমান, ভারত থেকে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে ফেনসিডিল-সহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার করে মেলা টাকাই মজুত রাখা হত জয়প্রকাশ সাহার বাড়িতে।
উল্লেখ্য, মালদহের গাজোল ২ নং পঞ্চায়েতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারেই রয়েছে ঘাকশোল গ্রাম। গ্রামে জাতীয় সড়কের ধারেই রয়েছে জয়প্রকাশ সাহার পাকা বাড়ি। সোমবার সেই বাড়ি থেকে কাউকে বাইরে বেরোতে দেখা যায়নি। বাড়ির ভিতর দিয়ে তালা দেওয়া ছিল। প্রতিবেশীরা জয়প্রকাশের বাড়ি থেকে কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে চর্চায় ব্যস্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন- অদম্য জেদকে সঙ্গী করেই প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় হারিয়েছেন, স্কুল কামাই ডায়েরিতেই নেই স্যারের
জয়প্রকাশ সাহার এক প্রতিবেশী পুতুল প্রামাণিক বলেন, ''ওঁর অবস্থা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছিল, এটা সবাই বুঝতে পারছিলাম। ইদানিং বেশ কয়েকটা পুকুর নিয়েছিল। যেগুলোতে মাছ চাষও শুরু করেছিল। কয়েক মাস আগে পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ পেয়ে বাড়ি তৈরি করে। কিন্তু ওঁর বাড়ি থেকে যে এত টাকা উদ্ধার হবে ভাবতেই পারছি না। এক সময় একবেলা খেয়েও ওঁকে দিন কাটাতে দেখেছি। ওঁদের হঠাৎ করে এই উত্থান সন্দেহজনক। বড় বড় পুকুর, দিঘি কিনে ফেলেছিল। তবে ও যে এত বড় অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে তা ভাবিনি।''
গাজোল ২ নং পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বিকাশ সাহার বাড়ি জয়প্রকাশ সাহার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে। প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বিকাশবাবু বলেন, ''জয়প্রকাশকে অনেকদিন ধরেই চিনি। ওঁর অবস্থার তেমন পরিবর্তন দেখিনি। তবে মাছের ব্যবসা করার জন্য মাঝে কয়েকটা পুকুর লিজে নিয়েছিল। নিতান্তই গরিব একটি পরিবার। খুব কষ্ট করে বাড়িটুকু করতে পেরেছে। রোজগার ছিল না বললেই চলে। ওঁরই বাড়ি থেকে কোটি টাকারও বেশি উদ্ধার হয়েছে, এটা ভাবতেই পারছি না। কোনওদিনও ওঁর বাজে অভ্যাস দেখিনি।''
আরও পড়ুন- ‘তৃণমূলের মুখ চুন হবে ঠিকই’, তবে বঙ্গে BJP-র সম্ভাবনা নিয়ে বোমা ফাটালেন তথাগত
এদিকে রাজ্য গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি ফেনসিডিল ও মাদকের কারবার থেকেই এই বিপুল পরিমাণ টাকা পেয়েছিল জয়প্রকাশ। এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত আরও তিনজনের নাম পেয়েছে সিআইডি। যাদের মধ্যে একজনের বাড়ি মালদহ শহরে বলে জানা গিয়েছে। যদিও এব্যাপারে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।