Advertisment

Premium: বাংলার এই মিষ্টিকে একশো'য়-১০০ দিয়েছিলেন রবি ঠাকুর, জিআই তকমা পাওয়ার অপেক্ষায় চন্দননগরের জলভরা

অটলজির জন্য চন্দননগর স্পেশ্যাল সূর্য মোদকের জলভরা নিয়ে যেতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
Jalbhara sandesh surya kumar modak

সূর্য মোদকের জলসভা সন্দেশ।

বাংলার মিষ্টির খ্যাতি জগৎজোড়া। বেশিরভাগ মিষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কোন না কোন ইতিহাস। বাঙ্গালীর সাধের রসগোল্লা ইতিমধ্যেই জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। এবার জিআই পেতে চলেছে চন্দননগরের জলভরা। ইতিমধ্যেই সেনিয়ে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। এমনটাই জানিয়েছেন চন্দননগর স্পেশ্যাল সূর্য মোদকের কর্ণধার শৈবাল মোদক।

Advertisment

অটলজির জন্য চন্দননগর স্পেশ্যাল সূর্য মোদকের জলভরা নিয়ে যেতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বারবারই সূর্য মোদকের জলসভা সন্দেশের ভূয়সী প্রশংসা শোনা গিয়েছে মমতার গলায়। মুখ্যমন্ত্রী সূর্য মোদকের প্রশংসা করায় আপ্লুত দোকানের কর্ণধার শৈবাল মোদক। তিনি বলেছেন, 'জলভরা আমাদের সবার। জলভরা যাতে জিআই তকমা পায় তার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। জলভরা জিআই তকমা পেলে বাংলার মিষ্টির পালকে আরও এক নয়া মুকুট জুড়বে। আমাদের জলভরা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল মুখ্যমন্ত্রী। ২০২২ সালে আমরা জিআই-এর আবেদন করেছি। মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানেই সবকিছু হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।'

বাংলার নানা প্রান্তের মিষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা ধরনের ইতিহাস। উৎসব অনুষ্ঠানে কিংবা প্রেম অথবা বিখ্যাত ব্যক্তির আগমন, মিষ্টির জুড়ি মেলা ভার। ঠিক তেমনই গ্রাম বাংলার অন্দরমহলে এমন কিছু মিষ্টির খোঁজ মেলে যেগুলির স্বাদ যেমন খাসা তেমনই এর ইতিহাস কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো। চন্দননগর স্পেশ্যাল সূর্য মোদকের জলভরা তালশাঁস- ঠিক তেমনই একটি মিষ্টি।

এই মিষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বাড়ির জামাইরা। শুনে অবাক হচ্ছেন তো? বর্তমান কর্ণধার শ্রী শৈবাল সেনের থেকেই জানা গেল এর নাটুকে ইতিহাস। মজার ছলেই তিনি জানালেন কীভাবে এই মিষ্টি জামাইষষ্ঠীর দিন নাজেহাল অবস্থা করেছিল বাড়ির জামাইদের। কর্ণধার শৈবাল মোদক জানিয়েছেন, "সাল তখন ১৮১৮। ঠিক জামাইষষ্ঠীর আগে আগে হঠাৎ করেই তেলেনিপাড়া বন্দোপাধ্যায় বাড়ি থেকে সূর্য মোদকের কাছে অনুরোধ আসে যে এমন এক মিষ্টি বানান যেটা দিয়ে জামাই ঠকানো যায়। তখনকার দিনে জামাইয়ের সঙ্গে বাড়ির মেয়ে বউরা একটু ঠাট্টা মশকরা করতেন। তখন সূর্য মোদকের মাথায় হাত কী বানাবেন কী বানাবেন। হঠাৎ করেই একদিন দেখতে পেলেন রাস্তায় তালশাঁস বিক্রি হচ্ছে। ব্যস! ওখানেই বুদ্ধি খেলে গেল, যে আকৃতি হবে তালশাঁসের আর ভেতরে থাকবে সিরাপ। গুড়ের পাক দেওয়া হয় এর ভেতরে, একে বেলো বলা হয়। অনেক ভাবনা চিন্তা করেই মিষ্টি বানানো হল।"

শৈবাল বাবু বলেন, "মিষ্টি চেখে দেখতে গিয়েই তো আসল গল্প। বাড়িতে জামাইদের আদরে কোনও ত্রুটি নেই। প্লেট ভর্তি মিষ্টি, তবে যেই তালশাঁসে কামড় বসিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে গায়ে জামায় রস পরে একাকার অবস্থা। সেই মুহূর্তেই একজন বলে ওঠেন এ তো জলভরা মিষ্টি! সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি শুদ্ধু লোকের মধ্যে হাসির রোল।" তাঁর বক্তব্য, "আমি সবথেকে গর্বিত মনে করি তখনই যখন ভাবি স্বয়ং রবি ঠাকুর এই মিষ্টি খেয়েছিলেন। বন্দোপাধ্যায় বাড়িতে এই মিষ্টি খাওয়ার পর তিনি উচ্ছ্বসিত হন। তাঁর চন্দননগরের বাড়িতে এই মিষ্টি অর্ডার করে নিয়ে গেছিলেন তিনি। তারপর ধরুন, অটল বিহারী বাজপেয়ীর এত ভাল লেগেছিল এই মিষ্টি যে নিজে ফোন করেছিলেন। আরেকজনের কথা না বললেই নয়, তিনি মহানায়ক উত্তমকুমার - এখান দিয়ে যখন যেতেন তখন দাঁড়িয়ে এই মিষ্টি নিয়ে গেছেন"।

কেমন দাম জলভরার? শৈবালবাবু জানিয়েছেন,'৩৫ গ্রামের দাম ৫০ টাকা এটা সবথেকে ছোট। এছাড়াও ৪৫ টাকা, ৬০ টাকার জলভরাও পাওয়া যায়। আর সব থেকে বড় জলভরার দাম ৯০০ টাকা'।

sweets of bengal
Advertisment