তিস্তাপারের আরেক বৃত্তান্ত: ভিক্ষাজীবীদের নিয়ে বনভোজন

রবিবারের বনভোজনের মেনুতে সকালে ছিল পাঁউরুটি কলা। দুপুরে ছিল ভাত, নিরামিষ ডাল, চিপস, বাঁধা কপির ঘণ্ট, মটর পনির, খাসির মাংস এবং টোম্যাটোর চাটনি।

রবিবারের বনভোজনের মেনুতে সকালে ছিল পাঁউরুটি কলা। দুপুরে ছিল ভাত, নিরামিষ ডাল, চিপস, বাঁধা কপির ঘণ্ট, মটর পনির, খাসির মাংস এবং টোম্যাটোর চাটনি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অন্য এক বনভোজনের সাক্ষী থাকল তিস্তাপার

জানুয়ারি মাসের শেষ রবিবারে তিস্তা পারে উপচে পড়েছিলো পিকনিকের ভিড়। সেই গতানুগতিকতার মধ্যেই এক ভিন্ন ছবি দেখা গেল। একতারা, দোতারা, খঞ্জনি বাজিয়ে নাচ গান করে দুশো ভিক্ষাজীবীকে সঙ্গে নিয়ে জলপাইগুড়ি তিস্তা পারে পিকনিকে মাতলেন জলপাইগুড়ির চার্লি চ্যাপলিন সুরেন্দর মন্ডল ওরফে রাজু জোকার। সকালে টিফিনের পর দিনভর হৈচৈ করে বিকেলে পেটপুরে মাংস ভাত খেয়ে সব্বাই দু হাত তুলে আশীর্বাদ দিয়ে গেলেন রাজু জোকারকে।

Advertisment

জলপাইগুড়ি দিনবাজার লিচুতলা এলাকার বাসিন্দা সুরেন্দর মন্ডল জলপাইগুড়ি শহরে রাজু জোকার নামে পরিচিত। পেশায় টিভি মেকানিক। নেশায় সমাজসেবী। বছরে বেশ কয়েকবার কখনও চার্লি চ্যাপলিন, কখনও রাজ কাপুর সেজে লোকের কাছ থেকে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানবাড়িতে গিয়ে টাকা তোলেন। সেই টাকার সঙ্গে নিজের উপার্জনের অংশ মিলিয়ে সমাজের প্রান্তবাসী মানুষদের জীবনে একটু আনন্দের স্বাদ এনে দেন তিনি।  কখনও ভিক্ষাজীবীদের, কখনও চা বাগান বা যৌনপল্লী এলাকার শিশুদের সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে শপিং মলে গিয়ে টাকা তাঁদের খাবার দাবার, জামাকাপড়, খাতাপত্র কিনে দেন রাজু।

রবিবারের বনভোজনের মেনুতে সকালে ছিল পাঁউরুটি কলা। দুপুরে ছিল ভাত, নিরামিষ ডাল, চিপস, বাঁধা কপির ঘণ্ট, মটর পনির, খাসির মাংস এবং টোম্যাটোর চাটনি।

publive-image কখনও চার্লি চ্যাপলিন, কখনও রাজ কাপুর সেজে লোকের কাছ থেকে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানবাড়িতে গিয়ে টাকা তোলেন

Advertisment

ভিক্ষাজীবী ফুলমতি ব্রজবাসীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল পিকনিকের চাঁদার পরিমাণ। তিনি জানালেন এক কানাকড়িও খরচ করতে হয়নি তাঁদের। বললেন, "রাজু বাবা আমাদের জন্য যা করে তা অনেক বড়লোক করে না। এইভাবে অন্যের থেকে টাকা তুলে নিজে ভাঙা বাড়িতে থেকে আমাদের মত মানুষদের নিয়ে পিকনিক কেউ করে না। ভগবানের কাছে ওর মঙ্গল কামনা করি।"

তিস্তাপারে অন্য যেসব দল পিকনিক করতে এসেছিল, তাঁদেরই একজন সুজাতা সরকার। তিনি বললেন,  "এরকম উদ্যোগ আমি কোনোদিন দেখিনি। খুব ভালো লাগলো। আমি ওঁদের সাথে নাচ গান করেছি। মোবাইলে সে ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছি। সব্বাইকে দেখাবো। আজ খানিকটা সময় একদম অন্যভাবে কাটল। ওঁর মঙ্গল হোক।"

publive-image এবারের পিকনিকে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা

রাজু জোকার ওরফে সুরেন্দর বললেন, "এবারে কালেকশন হয়েছিলো নগদ ৪০০০ টাকা।  আমি আরো ১১০০০টাকা দিয়েছি।  মোট ১৫০০০ টাকা নগদ খরচ হয়েছে। সামান্য উপার্জন করি। নিজে ভাঙা ঘরে থাকি। কিন্তু এ আমার নেশা।"