বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন উপ-প্রধান। সেই আনন্দে কর্মসংস্কৃতি লাটে উঠল গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। সারাদিন বাজল সানাইয়ের সুর, সঙ্গে উলুর ধ্বনী। ঘটা করে হল উপ-প্রধানের বিয়ের আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান। এলাহি অনুষ্ঠানের আয়োজক খোদ পঞ্চায়েত প্রধান ও একাংশ পঞ্চায়েত সদস্য। মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব বর্ধমান জেলা সফরে আসার আগেই শুক্রবার নজিরবিহীন এমন ঘটনা ঘটেছে জামালপুর ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। যা জানার পর প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সরব উগরে দিয়েছেন বিরোধীরাও।
জামালপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালনা করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। এই পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। তার মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা সদস্য। পঞ্চায়েতের প্রধান হলেন ডলি নন্দি। আর উপ-প্রধান শেখ সাহাবুদ্দিন মণ্ডল। কাগজে কলমে ডলি নন্দি প্রধান হলেও পঞ্চায়েতের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হলেন সাহাবুদ্দিনই। অন্য সদস্যদের থেকে সাহাবুদ্দিন বয়সেও অনেক ছোট। পঞ্চায়েত অফিস সংলগ্ন সেলিমাবাদ গ্রামে বাড়ি সাহাবুদ্দিনের। আগামী ৫ জুলাই উপ-প্রধান সাহাবুদ্দিন মণ্ডলের বিয়ে।
উপ-প্রধানের বিয়ে উপলক্ষে মাতোয়ারা জামালপুরের ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। আনন্দে মশগুল প্রধান ডলি নন্দি ও তাঁর অনুগত পঞ্চায়েত সদস্যরা। তাঁরাই এদিন অফিসের সময়ে পঞ্চায়েত দফতরে ঘটা করে উপ-প্রধানের বিয়ের আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
আয়োজন ছিল তাক লাগানো। একাধিক কাঁসার বাটি ও থালায় ভাত সহ হরেক রকম পদ সাজিয়ে উপ-প্রধানকে খাওয়ানো হয়। ভাত, মাংস, ডাল, তরকারি ছাড়াও মেনুতে ছিল বড় মাছের মাথার মুড়ো ,পায়েস দই, মিষ্টি ও চাটনি।
প্রধান ছাড়াও সদস্য চন্দনা পান, সৈয়দ মল্লিক, রুপালি বিশ্বাস এবং সমিতির সদস্য মণিরা বেগম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দেন পঞ্চায়েতের দুই আধিকারিক অরুণ মালিক ,জয়ন্ত ভট্টাচার্য সহ অন্যরা। প্রধান ও পঞ্চায়েতের সদস্যরা প্রথমে উপ-প্রধানের কপালে দইয়ের ফোঁটা পরিয়ে দেন। পরে উপ-প্রধানের মুখে তুলে দেওয়া হয় পায়েস। কেউ কেউ আবার সাহাবুদ্দিনের মুখে তুলে দেন বড় মাছের মুড়ো। পঞ্চায়েত অফিসের চেয়ারে বসেই হাসি মুখে বিয়ের আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন উপপ্রধান।
সরকারি অফিসে উপ-প্রধানের এই আইবুড়ো ভাতের ছবি এ দিন দুপুরে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। তাঁর পরেই শুরু হয়ে যায় ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার যাবতীয় প্রক্রিয়া। বিকালে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে আইবুড়ো ভাত অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রধান ডলি নন্দি ও উপ-প্রধান সাহাবুদ্দিন মণ্ডল মুখে কুলুপ আঁটেন। জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ‘ঘটনা বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। তবে এমনটা হয়ে থাকলে বাজে কাজই হয়েছে। কেন এমনটা হল সেই বিষয়ে খোঁজ নেব।’
ঘটনা বিষয়ে জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও নেতা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। অন্যদিকে ঘটনা আড়াল করতে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলার মুখপত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান নয়, সবটাই মিথ্যা অপপ্রচার। উপ-প্রধান পঞ্চায়েত অফিসে লাঞ্চের ভাত খাচ্ছিলেন।’ তাহলে সানাইয়ের সুর ,শঙ্খ ধ্বনী ,উলুর ধ্বনী এইসব কেন? জবাব মেলেনি প্রসেনজিতবাবুর কাছ থেকে।
ঘটনার কথা শুনে জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের আসল স্বরুপ। দেশের মধ্যে একমাত্র তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যরাই পঞ্চায়েত অফিসে সানাইয়ের সুর বাজিয়ে ও উলুর ধ্বনী দিয়ে দুপুরের লাঞ্চ সারেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কর্মসংস্কৃতি ফেরানোর কথা বলছেন। আর তাঁর দলেরই পঞ্চায়েত প্রধান,উপপ্রধান ও সদস্যরা অফিস আওয়ার্সে ঘটা করে পঞ্চায়েত অফিসে উপ-প্রধানের আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান করছেন। এর থেকে বড় লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। বাংলার মানুষ ওদের এইসব কর্মকাণ্ডের জবাব একদিন দিয়ে দেবে।’