৬০ বছর বাদে মিলছে স্বীকৃতি, বসছে জামালপুর হাসপাতালের জন্য জমিদানকারীর মূর্তি

লীলাবতির দান করা ৬ একরের বেশি জমিতেই গড়ে ওঠা জামালপুর হাসপাতাল। প্রতিদিন বহু মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পান এখানে।

লীলাবতির দান করা ৬ একরের বেশি জমিতেই গড়ে ওঠা জামালপুর হাসপাতাল। প্রতিদিন বহু মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পান এখানে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
jamalpur hospital lilabati devi statu

রবীন্দ্রজয়ন্তীতে আবক্ষমূর্তির উন্মোচন। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ তৈরির জন্যে জমিদান করেছিলেন বলে প্রতিথযশা ব্যবসায়ী মতিলাল শীলের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। কিন্তু একই রকম অবদানের স্রষ্টা হয়েও পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে গৃহস্থ পরিবারের বিধবা লীলাবতি মিত্র দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ব্রাত্যই ছিলেন। লীলাবতির দান করা ৬ একরের বেশি জমিতেই গড়ে ওঠা জামালপুর হাসপাতাল। প্রতিদিন বহু মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পান এখানে। কংগ্রেস জামানা ও তার পরের ৩৪ বছরের বাম জামানাতে স্বাস্থ্য দফতর বা কোন নেতা-মন্ত্রী লীলাবতিদেবীকে নূন্যতম মর্যাদাটুকু দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। অতিক্রান্ত তৃণমূল কংগ্রেস রাজত্বের ১১টা বছর। বহু আবেদন-নিবেদনেও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল। জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি উদ্যোগী হওয়ায় লীলাবতিদেবী মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা পেতে চলেছেন।

Advertisment

জামালপুর হাসপাতাল প্রাঙ্গনে সুসজ্জিত বেদী তৈরি করে সেখানেই বসানো হয়েছে শ্বেত শুভ্র পাথরের তৈরি লীলাবতিদেবীর আবক্ষ মূর্তি। সেই মূর্তির নিচে ফলকে লেখা রয়েছে তাঁর জমি দানের ইতিবৃত্ত। সোমবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবসের দিন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খাঁন,পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিক, বিডিও শুভঙ্কর মজুমদারবিএমওএইচ ঋত্বিক ঘোষ ,এলাকার বিধায়ক অলোক মাঝি সহ সকল জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে হবে লীলাবতীদেবীর ওই আবক্ষ মূর্তির আনুষ্ঠানিক উন্মোচন। সেই অনুষ্ঠানে লীলাবতিদেবীর উত্তরসূরিরাও উপস্থিত থাকবেন। দেরিতে হলেও ব্লক প্রশাসন ও জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান কর্তারা লীলাবতীদেবীকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা দেওয়ায় খুশি তাঁর উত্তরসূরিরা ।

হাসপাতালের সন্নিকটে থাকা সাবেকি বাড়িতে বসবাস করতেন লীলাবতিদেবী। তাঁর পরিবার প্রভূত সম্পত্তির মালিক ছিলেন। স্বামী ভৈরবচন্দ্র মিত্র প্রয়াত হবার পর নিঃসন্তান বিধবা লীলাবতিদেবী মানব কল্যাণে কিছু কাজ করার ব্যাপারে মনস্থির করেন। ভ্রাতুষপুত্র অমরেন্দ্রনাথ ঘোষ মাতৃস্নেহে আগলে রাখতেন লীলাবতিদেবীকে। এনারা সবাই প্রয়াত হয়েছেন। একই বাড়িতে এখন বসবাস করেন অমরেন্দ্রনাথ বাবুর স্ত্রী প্রভাতীদেবী, পুত্র সুশান্ত ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী, পুত্ররা ।

সুশান্ত ঘোষ বলেন, 'সালটা ছিল ১৯৬২। তখন বাংলায় কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রফুল্লচন্দ্র সেন। সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য তদানিন্তন সময়ে জামালপুরে হাসপাতাল বলতে কিছু ছিল না। তার কারণে বীনা চিকিৎসায় মানুষজন মারা যেতেন। যা ব্যথিত করতো লীলাবতিদেবীকে। তাই জামালপুরের মানুষজনের চিকিৎসার স্বার্থে হাসপাতাল গড়ার উদ্যোগ নেন তিনি। ১৯৬২ সালের ১৭ জুলাই লীলাবতিদেবী নিজের বাড়ির কাছেই খাঁপুর মৌজায় থাকা ৬ একর ৭০ শতক জমি রাজ্য সরকারকারকে নিঃস্বার্থে দান করেন। সেই জমিতে প্রথমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে ওঠে। পরে তা জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মর্যাদা পায়। সম্প্রতি হাসপাতালটি গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নিত হয়েছে। তবে হাসপালটির এত মানোন্নয়ন ঘটলেও হাসপাতাল তৈরির মূল কাণ্ডারী লীলাবতীদেবী ব্রাত্যই রয়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে ৬০ বছর বাদ তিনি মর্যাদার আসনে প্রতিষ্টা পাচ্ছেন।'

Advertisment

লীলাবতির ভ্রাতুষপুত্র অমরেন্দ্রনাথ ঘোষের স্ত্রী প্রভাতীদেবী বলেন, 'এখন আমার বয়স ৮০-র কাছাকাছি। আমার শাশুড়ি মা লীলাবতিদেবী হাসপাতাল তৈরির জন্যে বিশাল সম্পত্তি দান করেও মর্যাদা পেলেন না এই আক্ষেপ এতদিন বয়ে বেড়াচ্ছিলাম। মহান কাজের জন্য অবশেষে প্রশাসন আমার শাশুড়ি মাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা দেওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি।'

পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খাঁন ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ্য ভূতনাথ মালিক বলেন, 'মানুষের চিকিৎসার জন্যে এতবড় অবদান রাখা সত্ত্বেও লীলাবতিদেবী ব্রাত্যই ছিলেন। পূর্বতন কংগ্রেস বা বামফ্রন্ট কোন সরকার তাঁকে নূন্যতম মর্যাদাটুকু দেওয়ার মানসিকতা দেখায়নি। আমাদের দলের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় বাংলার যে কোন মানুষের ত্যাগ ও অবদানকে মর্যাদা দেওয়ার কথা বারে বারে বলে থাকেন। সেই পথে হেঁটেই লীলাবতিদেবীকে আমরা মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করছি। তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকুক এটাই আমরা চাই।'

জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, 'লীলাবতিদেবীকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরে আমরা গর্বিত বোধ করছি। হাসতালে চিকিৎসা করাতে আসা সকল মানুষজন ওনার অবদান এবার থেকে জানতে পারবেন।'

West Bengal East Burdwan