Village Fair: ভোট এলেই রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মতো করে স্লোগান বেধে ময়দানে নেমে পড়ে। তা বলে জুয়া খেলায় জুয়াড়িদের সাদর আমন্ত্রণ জানানোর এমন বার্তা এর আগে শেষ কবে শুনেছেন বঙ্গবাসী তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সবাইকে এবার জুয়া খেলায় এগিয়ে আসার আহ্বান এক 'তাজা যুবকের'।
বেনজির এই ঘটনা পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) জামালপুরের (Jamalpur)। বিষয়টি জানার পর পুলিশও নড়েচড়ে বসেছে। ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে (Social Media) এমন আহ্বান জানানোর ঘটনায় জড়িত যুবকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি করা হয়েছে।
জামালপুরের বেত্রাগড় (Betragar) গ্রামের অধীষ্ঠাত্রী দেবী হলেন শীতলা (Shitala)। বুধবার থেকে গ্রামের মন্দিরে শুরু হয়েছে শীতলা দেবীর পুজো। এই পুজো উপলক্ষে আগামী চারদিন মাতোয়ারা থাকবে গোটা বেত্রাগড় গ্রাম। পুজো উপলক্ষে ভক্তদের ঢল নামে গ্রামে, বসে মেলাও (Fair)। এমন এক ঐতিহ্যশালী পুজো প্রাঙ্গণে জুয়ার আসর বসবে বলে সামাজিক মাধ্যম মারফত সাধারণ মানুষকে জানিয়েছেন সুরজিত দাস (Surajit Das) নামে এক যুবক। জামালপুরের শুড়েকালনা গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবক পেশায় একজন লটারি টিকিট বিক্রেতা।
সামাজিক মাধ্যমে শীতলা দেবীর ছবি দিয়ে ওই যুবক লিখেছেন, “আজ থেকে চার দিন বেত্রাগড়ে মায়ের তলায় জুয়া চলবে। সকল জুয়া খিলাড়িকে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।" 'জুয়া খেলা'য় সকলকে অংশগ্রহণ করার বার্তা দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একজন লটারি টিকিট বিক্রেতার এমন পোস্ট দেখে জামালপুলের বহু বাসিন্দা স্তম্ভিত হয়ে যান। জুয়া খেলায় সকলকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান সংক্রান্ত বার্তার বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায় জামালপুরে ।
বহু মানুষ তাঁদের মুঠো ফোনে এই বার্তার বিষয়টি বন্দি করে রাখেন। আর বেত্রাগড় গ্রামে এই পুজো যাঁরা বংশ পরম্পরা ধরে করে আসছেন সেই বংশের সন্তান পার্থ রায় বলেন, "শীতলা মায়ের পুজোয় জুয়ার আসর বসানোর স্পর্ধা দেখানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। কেউ আশেপাশে লুকিয়ে কি করছে জানি না। তবে শীতলা মায়ের তলায় চারদিন জুয়ার আসর বসবে বলে যিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেছেন তার কঠিন শাস্তি হোক এটাই আমি চাই।"
যদিও জুয়া খেলায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বার্তা ছড়ানোর উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে অভিযুক্ত সুরজিতের কাছে জানতে চাওয়া হলে প্রথমেই তিনি হকচকিয়ে যান। পরে তিনি বলেন, "আমি জুয়া খেলি না। জুয়া খেলাও চালাই না। তবে যাঁরা জুয়া খেলা চালায় তাঁরা আমায় বললো চারদিন বেত্রাগড় শীতলা তলায় জুয়া খেলা চলবে। যাঁরা জুয়া খেলা চালাবে তাদের অনুরোধেই আমি আমার ফেসবুক (Facebook) স্ট্যাটাসে জুয়া খেলার আসর বসার বিষয়টি লিখে পোস্ট করেছি। এখন বুঝতে পারছি এটা করে আমি বড় অপরাধ করে ফেলেছি।"
আরও পড়ুন- Abhijit Gangopadhyay: বিজেপিতে ‘অভিষেক’ অভিজিতের, আজই শুরু সেকেন্ড ইনিংস
এদিকে এমন ফেসবুক (Facebook) পোস্টের কথা জেনে স্তম্ভিত বর্ধমান সদর দক্ষিণ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অভিষেক মণ্ডলও। তিনি বলেন,“আমি খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" অন্যদিকে বর্ধমান আদালতের সিনিয়র আইনজীবী কমল দত্তও স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি বলেন, "বিনা সরকারি অনুমতিতে কেউ কোনও জুয়া খেলা চালাতে পারে না। যদি চালায় তবে সেটা আইনত অপরাধ বলেই বিবেচিত হবে। সমাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জুয়া খেলায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো আরও বড় অপরাধ। IT আইন অনুযায়ীও এটা অপরাধ।"
সামাজিক মাধ্যমে জুয়া খেলায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের বিষয়ে জেনে কটাক্ষ করেছেন জেলা BJP নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র। তিনি বলেন, "ভালো করে একটু খোঁজ নিলেই পরিস্কার হয়ে যাবে এমন বিজ্ঞাপনি প্রচারের পিছনে ’খেলা হবে’ স্লোগানের অনুপ্রেরণাই কাজ করেছে।" যদিও বিজেপি নেতার এইবক্তব্যকে পাত্তা না দিয়ে তৃণমূল (TMC) কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন
, "সামাজিক মাধ্যমে জুয়া খেলায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওই ব্যক্তি চরম অন্যায় কাজ করেছে। আমি চাই পুলিশ ওই ব্যক্তির বিরূদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।"