কাশ্মীরের কুলগামে জঙ্গি হামলার পর বুধবার মধ্যরাতে শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে আকাশপথে কলকাতায় এসে পৌঁছল জঙ্গি হানায় নিহত মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিকের মৃতদেহ। বৃহস্পতিবার সকালে সড়কপথে কফিনবন্দী সেইসব দেহ মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানার বাহালনগর গ্রামে নিহতদের পরিবারের হাতে তুলে দিল রাজ্য সরকার। ভূস্বর্গে জঙ্গিদের হাতে নিহত শ্রমিকদের দেহ গ্রামে ফিরতেই স্বজনদের হাহাকারে ক্রমশই ভারী হয়ে পড়ে মুর্শিদাবাদের এই গ্রাম।
আরও পড়ুন, রাজস্থান-গুজরাটে মারা গেলে মুসলমান, আর কাশ্মীরে হলে বাঙালি: দিলীপ ঘোষ
তবে এই পুরো ঘটনায় কেন্দ্র সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তীব্র সমালোচনা করে সরব হন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মুর্শিদাবাদে পৌঁছে কলকাতার মেয়র চাঁচাছোলা ভাষায় কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, "কাশ্মীরের ৩৭০ রদ করে কী লাভ হলো? সাধারণ মানুষকে কুকুরের মত গুলি করে মারা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার চুপ করে বসে আছে। কাশ্মীরে যারা এই ছেলেদের মেরেছে তাদের কেন টেনে এনে মারা হচ্ছে না?"
কাশ্মীরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সফর নিয়েও কটাক্ষ করে ফিরহাদ হাকিম বলেন, "বাইরের দেশের সাংসদদের যেখানে নিরাপত্তা আছে, সেখানে কেন দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নেই? আমাদের হোম সেক্রেটারিকে বলেছি যেন কেন্দ্রের হোম সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলেন। যাঁরা ওখানে আছেন, তাঁদের যেন সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। বিজেপি একটা খেলা খেলছে। এটা ভারতবর্ষকে ভাঙার একটা চক্রান্ত"।
কাশ্মীরে নিহত শ্রমিকদের মৃত্যু প্রসঙ্গে কী বললেন ফিরহাদ হাকিম?#Kashmir pic.twitter.com/a6gVvVE4QY
— IE Bangla (@ieBangla) October 31, 2019
অন্য দিকে একই ইস্যুতে টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, "কাশ্মীরের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। পাঁচজন শ্রমিককে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা গভীরভাবে শোকাহত। কাশ্মীরে এখন কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। আইন-শৃঙ্খলার ভার কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। সে কারণে আমরা এ ঘটনার তদন্তের দাবি জানাচ্ছি, যাতে সত্যটা সামনে আসে।" এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। রাজ্যপাল বলেছেন, "এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। বাঙালি শ্রমিকদের মৃত্যুতে শোকাহত।"
আরও পড়ুন, ‘বাঙালিদেরই বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে’, কুলগামকাণ্ডে কেন্দ্রকে নিশানা মমতা বাহিনীর
পাশাপাশি এই রাজনৈতিক বাক্যবাণের মধ্যেই কাশ্মীরে নিহত কামরুদ্দিন শেখের স্ত্রী রওশনারা বিবি, নাঈমউদ্দিন শেখের স্ত্রী আবিদা বিবি, মুরসেলিম শেখের স্ত্রী সায়রা বিবিরা আক্ষেপ করে চলেছেন প্রিয়জনকে হারানোর। আকাশের দিকে তাকিয়ে বিলাপের সুরে কামরুদ্দিন শেখের স্ত্রী রওশনারা বিবি বলেন, "শেষবারের মতো ফোনে কথাও বলতে পারলাম না। এখন স্মৃতি আগলে বেঁচে হা-হুতাশ করে জীবন কাটাতে হবে।"
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিকেলে সাগরদিঘি এলাকায় নিহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী।