/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/11/kcaTZp8ZTsQInB5AhLCT.jpg)
পিকনিকের মেনুতে মাছ মাংস যা থাকুক না, শেষপাতে মিষ্টি মুখের জন্য জয়নগরের মোয়াটায় চাই! Photograph: ( এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ)
Jaynagarer Moa: পিকনিকের মেনুতে মাছ মাংস যা থাকুক না, শেষপাতে মিষ্টি মুখের জন্য জয়নগরের মোয়াটায় চাই! ট্রেনের কামরাতে তর্ক হচ্ছিল অফিস ফেরত ডেলি প্যাসেঞ্জারদের। মোয়া নিয়ে তর্ক হবেই নাই বা কেন? বাঙালির শীতকাল মানেই অন্যরকম এক সেন্টিমেন্ট। মিঠে রোদ্দুর, পিকনিক, নলেন গুড় আর? জয়নগরের মোয়া। এগুলো ছাড়া বাঙালির শীতকাল তো বৃথা!
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/11/JZYu1T7edD8zp5BFaW75.jpg)
শীতকালে মোয়া পেটে না পড়লে যেন মনটায় আনচান করতে থাকে। মনে হয় কিছু একটা বাদ যাচ্ছে। পুজোর পরে হালকা ঠাণ্ডার আমেজ আসতে না আসতেই মিষ্টির দোকানের কাঁচের শো-কেসের ওপর ঘাটি গেড়ে বসে পেল্লাই সাইজের এক রঙ্গিন হাঁড়ি। সরা দিয়ে মুখ বন্ধ। ভিতরে সাজানো অমৃতের স্বাদ। ঢাকনা খুললেই বেরিয়ে আসে মধুময় গন্ধ। দোকানে ক্রেতার ভিড় জমাতে শুধু হাড়ির গায়ে লেখা ‘জয়নগরের মোয়ার ’ নামই যথেষ্ট।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/11/hryZesM3GbBKiPTS8cB5.jpg)
শহর এবং শহরতলীতে শীতের আমেজ আসতে শুরু করলেই শীতের স্পেশাল মিষ্টির দোকান যত্রতত্র গজিয়ে ওঠে। নলেন গুড়, পাটিসাপটা, গুড়ের রসগোল্লা সঙ্গত দিলেও প্রধান আকর্ষণ কিন্তু জয়নগরের মোয়া। মুখে দিলে মিলিয়ে যায়, আঙুলে লেগে থাকে মোহময় গন্ধ। যে জয়নগরের মোয়া নিয়ে এত মাতামাতি সেই মোয়ার জন্ম কিন্তু বহড়ুর। মোয়া তুমি কার? জয়নগর না বহড়ুর, এ নিয়ে লড়াই থাকলেও আসল উত্তর আগেই দেওয়া। জয়নগর ও বহড়ুর লোকেরা জানেন মোয়া তৈরির আসল ইতিহাস। জয়নগর তো থানার নাম। চেনার সুবিধার জন্য জয়নগরের নাম নিয়েই বিক্রি হয় মোয়া।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/11/i5UCq6sjIh0wPN7HWG8w.jpg)
সময়টা ছিল উনিশ শতক। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বহড়ু গ্রামের এক বৃদ্ধ এক কাণ্ড ঘটিয়ে বসলেন। নিজের খেতের চাষ করা কনকচূড় ধানের খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড় মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে তিনি পরিবেশন করলেন একটা অনুষ্ঠানে। এমন জিনিস আগে কেউ খায়নি। ধন্য ধন্য পড়ে গেল চারিদিকে। এভাবেই জন্ম নিল মোয়া। জয়নগর টাউনের মধ্যেই একটি গ্রাম পঞ্চায়েত, বহড়ু। শিয়ালদা থেকে সাউথের রেললাইন বরাবর গেলে জয়নগরের ঠিক আগের স্টেশন এই বহড়ু।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/11/3N59sJBgtjxIcCLbPUBJ.jpg)
বাংলার বাইরে মুম্বই-দিল্লি কিংবা পৃথিবীর যে কোণায় বাঙালি রয়েছে জয়নগরের মোয়া মানেই তাতে লেগে আছে বহড়ুর হাতের ওম। এই মোয়া বানানোর কৌশল আয়ত্ত করা সম্ভব হয়নি অন্য কারও। বহড়ুর একেক জন মহিলা দিনে ১২ থেকে ১৬কেজি মোয়া পাকিয়ে দেন অনায়াসে। চোখ বুজে মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটে আড়াইশো মোয়া পাকান। জয়নগরের মোয়ার প্রথম জীবনে কনকচুড় ধানের খই আর গুড় ছাড়া কিছুই থাকত না। যত দিন গেছে মোয়াতে মিশল গাওয়া ঘি, খোয়া ক্ষীর। খই আর গুড়ের জুটিও আরও অন্তরঙ্গ হল। বাঁধনও মজবুত হল। স্বাদও বেড়ে গেল কয়েকগুণ।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/11/fEpK06T7nikeQzpgrvZl.jpg)
জয়নগরের মোয়ার এনসাইক্লোপিডিয়া বলা হয় ভবানী সরকারকে। পেশায় ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, চাকরি করতেন গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্সে। বহড়ুর ভূমিপুত্র ভবানীবাবু আক্ষরিক অর্থে মোয়া গবেষক। জয়নগর তল্লাট তাঁর হাতের মুঠোয়। তাঁরই উদ্যোগে ছাপ্পান্নজন ব্যবসায়ী জয়নগরের মোয়ার জিআই শংসাপত্র পান। এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মিষ্টি উদ্যোগের অন্যতম কর্তা ভবানী সরকারের কথায়, ‘‘হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করে দিয়েছে জয়নগরের মোয়া। সে তালিকায় শুধু পুরুষ নেই, গৃহবধূরাও রয়েছেন।’’
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/11/Rth8vafyr2MTB0vmfSDA.jpg)
বহড়ুতে স্থায়ী দোকান মেরেকেটে পঁচিশটা। মল্লভপুর, দাসপাড়া, নাইয়াপাড়ায় থাকেন এই ব্যবসায়ীরা। কিন্তু শীত এলেই সেই সংখ্যা তিনগুণ! ব্যবসায়ীদের ছেলেরা আলাদা আলাদা দোকান করেন। কোয়ালিটির ফারাকে মোয়ার দামেরও হেরফের হয়। দেড়শো টাকা কেজি থেকে দাম পৌঁছতে পারে পাঁচশো-সাড়ে পাঁচশো টাকা কেজিতেও। এক-এক কেজিতে কুড়িটি করে মোয়া। খাঁটি জয়নগরের মোয়ার ক্ষেত্রে খই আর গুড়ের রসায়নটাই আসল হয়ে দাঁড়ায়। খই মানে কনকচূড়। বাংলায় মরিশাল নামে আরেক রকমের খইয়ের ধানও চাষ হয়। স্বাদে, গন্ধে কনকচূড়ের থেকে ঢের পিছিয়ে এই ধান। অথচ, কলকাতা ও শহরতলির বাজারে ‘জয়নগরের মোয়া’ তকমার আড়ালে গিজগিজ করছে এই মরিশাল খইয়েরই মোয়া। একইসঙ্গে, আসল নলেন গুড় পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠেছে এখন।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/11/5iOjCvW4fC2LL3kDmV45.jpg)
উৎকৃষ্ট মোয়ার জন্য প্রয়োজন খাঁটি নলেন গুড়। জিরেন খেজুর কাঠ থেকে রস সংগ্রহ করে শিউলিরা (যাঁরা খেজুর রস সংগ্রহ করেন) রেখে দেন তিন দিন। তারপর, সেই রস সামান্য আঁচে জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় নলেন গুড়। এই নলেন গুড়ের সঙ্গে কনকচুর খই, খোয়া ক্ষীর, কাজু, পেস্তা, ঘি এর যুগলবন্দীতে তৈরি হয় আসল মোয়া। মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়। খাদ্য রসিকরা একটু মুখে দিলেই বুঝে যান আসল আর নকলের ফারাক। শীতকাল আর জয়নগরের মোয়া এটা বাঙালির আলাদা এক সেন্টিমেন্টের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। মিষ্টির দোকানে যতই না না ধরনের মিষ্টি থাকুক না জয়নগরের হাড়ি ছাড়া সে দোকান অসম্পূর্ণ।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/11/pT8virPNgJvkDAmD88lQ.jpg)