Advertisment

কালনাগিনী কেউটেই দেবী! ধুমধাম করে ঝাঁকলাই সাপের পুজো বাংলার শস্য ভাণ্ডারে

কোন বিশ্বাস থেকে সাপের পুজো করেন গ্রামবাসীরা?

IE Bangla Web Desk এবং Rajit Das
New Update
jhanklai snakes are worshiped as goddesses in several villages of east-burdwan bhatar , কালনাগিনী কেউটেই দেবী! ধুমধাম করে ঝাঁকলাই সাপের পুজো বাংলার শস্য ভাণ্ডারে

ঝাঁকলাই সাপের পুজো।

কারুর কাছে তিনি পরিচিত ঝাঁকলাই নামে। আবার কেউ তাকে বলেন ঝঙ্কেশ্বরী। এমন নানা নামে যার পরিচিতি তিনি আসলে বিষধর কেউটে প্রজাতির সাপ। বংশ পরম্পরায় প্রতি বছর আষাড়ের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে সেই সাপ'কেই দেবীজ্ঞানে পুজো করে আসছেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতার ও মঙ্গলকোটের সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisment

মহা ধুমধাম করে বুধবার ঝাঁকলাইয়ের পুজো হল ভাতারের বড়পোশলা, শিকোত্তর, মুকুন্দপুর এবং মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা, পলসোনা, মুশারু এবং নিগন গ্রামে। পূর্বে এই সাত গ্রামে ঝাঁকলাইয়ের অবাধ বিচরণ ছিল। কিন্তু এখন শুধুমাত্র ভাতারের বড়পোশলা এবং মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা,মুশারু ও পলসোনা গ্রামে এখনও ঝাঁকলাই সাপ দেখা যায়। এই চার গ্রামে জ্যান্ত ঝাঁকলাই সাপকেই এদিন দেবীজ্ঞানে পুজো করা হল।

এলাকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস ঝাঁকলাই বিষধর হলেও সে কাউকে কামড়ায় না। কোনও কারণে কাউকে ছোবল দিলে দেবীর মন্দিরের মাটি তাঁর শরীরে লেপে দিলেই তিনি বিষমুক্ত হয়ে যান। এই বিশ্বাস নিয়েই আজও ঝাঁকলাই সাপকে সঙ্গে নিয়ে ঘর করেন এইসব গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামবাসীদের কথায়, তাঁদের গ্রামের প্রতি বাড়ি, মন্দিরে বিষধর কেউটে প্রজাতির ঝাঁকলাই সাপের অবাধ বিচরণ।

গ্রামগুলিতে এই ঝাঁকলাই সাপ নিয়ে অনেক লোককথা প্রচলিত আছে। এলাকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস ঝাঁকলাই আসলে কালনাগিনী। লক্ষ্মীন্দরকে লোহার বাসরঘরে দংশন করার পর পালানোর সময় বেহুলা তাকে লক্ষ্য করে কাজললতা ছুড়ে মারেন। কাজললতার আঘাতে কালনাগিনীর লেজ কেটে যায়। তাই ঝাঁকলাইয়ের লেজ কাটা।

পলসোনার বাসিন্দাদের কথায় জানা যায়, পলসোনা গ্রামে একটা ডাঙা আছে। সেই ডাঙার নাম খুনগোর। বেহুলার শাপে কালিয়াদহের কলনাগিনী মর্তে এসে খুনগোর ডাঙায় বসবার করতে শুরু করে। গ্রামের বাসিন্দা মুরারীমোহন চক্রবর্তীকে স্বপ্নাদেশে কালনাগিনী পুজো করার কথা জানায়। সেই থেকেই পলসোনা গ্রামে ঝাঁকলাইয়ের পুজো হয়ে আসছে। আরও জানা যায় যে, ঝাঁকলাইয়ের গায়ের রং কালচে বাদামি।
যেসব গ্রামে ঝাঁকলাই সাপ দেখা যায় সেইসব গ্রামে সচরাচর অন্য কোনও বিষধর সাপ দেখা যায় না। ঝাঁকলাই রাতে বের হয় না। এমনকী এই সাপ এলাকা ছেড়েও বের হয় না।

ঝাঁকলাই নিয়ে গ্রামের মানুষজনের ধর্মীয় বিশ্বাস যাই থাক বিজ্ঞান মঞ্চ বিষয়টিকে অন্য ভাবে দেখতেই আগ্রহী। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বর্ধমান জেলা কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, 'সাপ এমনিতেই ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণী। কোনও কারণ ছাড়া সাপ কামড়ায় না। তাছাড়া ধর্মীয় রীতিনীতির কারণে এখানকার মানুষেরা সাপকে বিরক্ত করেন না। তাই উভয়ের মধ্যে সহাবস্থান তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিনের সহাবস্থানের ফলে ওইসব গ্রাম গুলিতে সাপের কামড়ের ঘটনা খুবই কম। তবে এই সাপের বিষ আছে। কামড়ালে হাসপাতালে যেতে হবে।'

West Bengal East Burdwan burdwan
Advertisment