জিয়াগঞ্জের শিক্ষক পরিবার হত্যাকাণ্ডের পুননির্মাণ করল পুলিশ। বৃষ্টির মধ্যেই বুধবার গভীর রাতে ধৃত উৎপল বেহেরাকে নিয়ে লোক চক্ষুর আড়ালে চলে এই পুননির্মাণ। তবে, জিয়াগঞ্জ হত্য়াকাণ্ডের তদন্তের আগ্রগতি নিয়ে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার শ্রী মুকেশ বলেন, 'খুব কম সময়ের মধ্যে কি ভাবে শিক্ষক পরিবারকে খুন করা হয়েছিল তা নিখুঁত ভাবে দেখিয়েছে উৎপল।'
দশমীর দিন হত্যা করা হয় জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানের বাসিন্দা শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের গোটা পরিবারকে। হাড় হিম করা এই হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় রাজ্যজুড়ে। কে খুন করল? খুনী কি পেশাদার? তা ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে। তদন্তে নেমে পুলিশ আটক করে নিহত শিক্ষকের ব্যবসায়িক অংশীদার সৌভিক বণিককে। ঘটনার এর সপ্তাহের মধ্যেই হত্য়ার রহস্যভেদ করে গোয়েন্দারা। গ্রেফতার করা হয় মূল অপরাধী পেশায় রাজমিস্ত্রি সাগড়দিঘি থানার সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা উৎপল বেহেরাকে।
আরও পড়ুন: জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের হাড়হিম করা নীল নকশা: অর্ডার দেওয়া চপার দিয়ে নিপুণভাবে খুন, গামছায় মোছা রক্ত!
পুলিশ দাবি করে, হত্যার পিছনে বিমা সংক্রান্ত লেনদেন রয়েছে। বন্ধুপ্রকাশের কাছে ২৪ হাজার ১৬৭ টাকা পেত উৎপল বেহরা। প্রিমিয়ামের ওই টাকা জমা করেনি বন্ধুপ্রকাশ। সেই টাকা ফেরত চাওয়াতে শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ নাকি গালিগালাজ করেন উৎপলকে। তার পরেই ওই খুনের পরিকল্পনা করে সে। দশমীর দিন বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি যায় উৎপল। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তাকে বাড়ির মধ্যে আসতে বলা হয়। সেই সুযোগেই শিক্ষকের পরিবারকে খুন করে উৎপল। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, ‘ধৃত জেরায় স্বীকার করেছে সে দোকান থেকে হাঁসুয়া কিনে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। জিয়াগঞ্জে তার দিদির বাড়ি। পুজোর সময় উৎপল সেখানেই ছিল।দিদির বাড়িতে বসেই শিক্ষক পরিবার খুনের নকশা বানায় সে। এরপর পরিকল্পনা মত খুন করে ওই রাজমিস্ত্রি।’
আরও পড়ুন: ট্রেন যাত্রার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা পড়ুয়াদের, যাত্রী নিরাপত্তা ঘিরে প্রশ্ন
এই হত্যার তদন্তে কেন উৎপলকে নিয়ে কেন পুননির্মাণ হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। এরই মাঝে বুধবার বৃষ্টিভেজা রাতে ধৃতকে নিয়ে নিহত শিক্ষকের বাড়ি লেবুবাগান সহ নানা জায়গায় চলে পুননির্মাণ। পুলিশের লাল রঙের টাটা সুমো করে আনা হয়েছিল ধৃতকে। ঘেরাটোপের মধ্যে দিয়ে উৎপলকে নিয়ে যাওয়া হয় ওই বাড়ির ভিতরে। খুব সন্তর্পনে গোপনে ঘটনার পুননির্মাণ করে পুলিশ। এরই মধ্যে উৎসাহী স্থানীয় মানুষ ছুটে আসলে তাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
এর আগে তদন্ত নিয়ে নিহত শিক্ষকের মা মায়ারানী পাল প্রশ্ন তুলেছিলেন। পরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন নিহত শিক্ষকের পরিবারের সদস্যরা।