টোটো এম্বুলেন্স নিয়ে রোগীদের মেডিকেল কলেজ হোক অথবা নার্সিংহোম অতি সহজেই পৌঁছে দিচ্ছে মালদার যুবক জিতেন চৌধুরী। তাই এখন অনেক মানুষের কাছে অ্যাম্বুলান্স জিতেন বলে পরিচিত হতে শুরু করেছে ওই যুবক।
মালদা শহরের বাগবাড়ি বাঁধ এলাকার বাসিন্দা জিতেন চৌধুরী, বয়স মাত্র ২২ বছর । দরিদ্র পরিবারের জিতেন চৌধুরীর বাবা বাবলু চৌধুরী পেশায় লরিচালক। কোনওরকমে ধার-দেনা করে টোটো কিনেছে জিতেন। আর সেই টোটোকে এখন অ্যাম্বুলান্স হিসাবে ব্যবহার করে রোগী পরিষেবা দিয়ে চলেছেন ওই যুবক।
ইতিমধ্যে ১৫ থেকে ১৭ জন রোগীকে জরুরীকালীন অবস্থায় ওই যুবক তাঁর অ্যাম্বুলেন্স টোটোতে করে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন। টোটোর সামনে বড় বড় হরফে লেখা রয়েছে অ্যাম্বুলান্স। সেই টোটোতেই দেওয়া রয়েছে জিতেন চৌধুরীর মোবাইল নম্বর ৮৪৩৬৯১৯৩৬৬। জিতেনের এই পরিষেবা দেখে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
অ্যাম্বুলান্স জিতেন বলেন, 'কয়েক মাস আগে পরিবারের এক আত্মীয়কে বাগবাড়ি থেকে টোটো করে মেডিকেল কলেজ নিয়ে যেতে পারিনি। ফলে সেই আত্মীয়র মৃত্যু হয়েছিল । তখন থেকে ইচ্ছা ছিল টোটো কিনে সাধারণ রোগীদের এভাবে পরিষেবা দেওয়ার। অনেক কষ্ট করে টোটো কিনেছি। তাতেই অ্যাম্বুলান্স হিসাবেই পরিষেবা দিচ্ছি।'
জলপাইগুড়ির করিমুল হক একসময় বাইক অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের পরিষেবা দিয়ে পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন। আর তার এই পরিষেবায় এখন জিতেন চৌধুরীকে অনুপ্রাণিত করে তুলেছে। করিমুল সাহেবের মত তিনি হতে না পারলেও, চেষ্টা করবেন সারা জীবন এভাবেই টোটো করে মুমূর্ষ রোগীদের হাসপাতাল বা নিকটবর্তী নার্সিংহোমে পৌঁছে দেওয়ার।
জিতেন চৌধুরী বলেন, 'পরিবারে আর্থিক সমস্যার জন্য বেশিদুর পড়াশোনা করতে পারিনি। বাবা সামান্য লরিচালক। কিছু টাকা জমিয়ে এবং বাবার কাছে সহযোগিতা নিয়ে টোটো কিনেছি। কিন্তু আমার প্রথম থেকে ইচ্ছা ছিল রোগীদের যেভাবেই হোক সময়ের মধ্যে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার। সেই কাজই এখন করে চলেছি। কারণ, সবাই অ্যাম্বুলান্স ভাড়া করতে পারে না। আবার কোনও কোনও সময় অ্যাম্বুলান্সের বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগে উঠছে। সাধারণ রোগীরা বিপাকে পড়ছে। এই টোটো নিয়ে আমার পক্ষে যতটা দূর রোগীদের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব, চেষ্টা করছি। তবে সাত আট কিলোমিটারের বেশি যেতে পারি না। কারণ, টোটো ব্যাটারিতে শেষ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মালদা শহরের মধ্যে যতটা পারছি রোগীদের পরিষেবা দিয়ে চলেছি। মানুষ হাসিমুখেই আমার এই পরিষেবাকে আশীর্বাদ করছে। এটাই আমার কাছে বড় পাওনা।'