রাজস্থানের ডাঃ অর্চনা শর্মার দুঃসহ মৃত্যুর প্রতিবাদে আগামীকাল রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচীর ডাক অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর’সের তরফে।
অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা জানিয়েছেন, “যে ভাবে রাজস্থানে ডাঃ অর্চনা শর্মা আত্মহত্যা করেছেন, এই ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ডাক্তার সমাজ আজও কতটা অসহায়”। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের বিভিন্ন অংশে রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের মদতে ডাক্তারদের ওপর যে আক্রমণের ঘটনা ঘটে চলেছে সে ব্যাপারেও মুখ খুলেছেন তিনি।
তিনি বলেন, "এমন মৃত্যু দুঃখের। এই মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এই মৃত্যুর তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে”।
তাঁর কথায়, 'এটা শুধুমাত্র একটা মৃত্যু নয়। এটা হত্যা'! যেভাবে ডাক্তার অর্চনা শর্মাকে ভয় দেখিয়ে এফআইআর করে তার এবং তার স্বামীকে শাসানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে সংগঠনের তরফে ক্ষোভ উগরে দেওয়া হয়েছে।
আগামীকালের কর্মসূচীর পাশাপাশি ডাঃ অর্চনা শর্মার দুঃসহ মৃত্যুতে তাঁর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আগামী শনিবার, জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের ডাকে, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুপুর ২টোয় এক প্রতিবাদ সভা ও স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে"।
সেই সঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিও জানান হয়েছে। এর পাশাপাশি ডাক্তার সমাজকে এই ধরণের ঘটনার সম্মুখীন যাতে ভবিষ্যতে না হতে হয় তার জন্য জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের তরফে রাষ্ট্রপতি এবং প্ৰধানমন্ত্রীর কাছে এক স্মারকলিপি পাঠান হবে বলেও সংগঠনের তরফে জানান হয়েছে।
এর পাশাপাশি বেশ কয়েক দফা দাবিও তুলে ধরা হয়েছে। সংগঠনের তরফে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে, “রাজস্থানের চিকিৎসক অর্চনা শর্মার দুঃসহ মৃত্যু, গোটা দেশের চিকিৎসক সমাজকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে।
হাসপাতালে রুগী মৃত্যুতে নজিরবিহীন ভাবে খুনের ধারা আমাদের স্তম্ভিত করেছে। তারপরেও নানা প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তির ধারাবাহিক মানসিক নির্যাতন অর্চনাকে প্ররোচিত করেছে আত্মঘাতী হতে। এই দুঃসহ মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। রাজস্থান হাইকোর্টকে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করতে হবে এবং সেই সঙ্গে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে”।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় ২২ বছরের আশা বাইরওয়ার। দাউসার লালসটের আনন্দ হাসপাতালে মারা যান তিনি। এই মৃত্যুর জন্য ওই তরুণীর স্বামী ও আত্মীয়রা চিকিৎসক অর্চনা শর্মাকে দায়ী করেন।
মৃতদেহ নিয়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। অর্চনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের দাবি ওঠে। মৃতার আত্মীয়দের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে মাঠে নামেন স্থানীয় বিজেপি নেতারাও। এরপরই গত মঙ্গলবার আত্মহত্যা করেন ডা. শর্মা। সঙ্গে একটি সুইসাইড নোটও লিখে যান তিনি।
পুলিশের দাবি, সেই সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, "আমি আমার স্বামী এবং বাচ্চাদের ভীষণ ভালোবাসি। আমার মৃত্যুর পর দয়া করে ওঁদের কেউ বিরক্ত করবেন না। আমি কোনও ভুল কাজ করিনি এবং কাউকে খুন করিনি। ময়নাতদন্তেই স্পষ্ট ওই মহিলার কিছু গুরুতর সমস্যা ছিল। এভাবে চিকিৎসকদের হেনস্থা করা বন্ধ করুন। আমার মৃত্যুই হয়তো আমার নিরপরাধ হওয়ার প্রমাণ দেবে। দয়া করে নিরপরাধ চিকিৎসকদের হেনস্থা করা বন্ধ করুন"। এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়।
এব্যাপারে তাঁর স্বামী ডা. সুনীত উপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে দাবি করেন, ‘স্থানীয় এক বিজেপি নেতার মদতেই পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে তাকে এবং তার স্ত্রীকে’। এই ঘটনার পর তড়িঘড়ি দাউসার পুলিশ সুপার অনিল কুমারকে সাসপেন্ড করা হয়, এবং সেই সঙ্গে এই মৃত্যু নিয়ে এক টুইট বার্তায় দুঃখ প্রকাশ করেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট।