স্ত্রীর প্রয়াণে শ্রাদ্ধের ভুরিভোজের আয়োজনে মন সাড়া দেয়নি স্বামীর। বরং স্ত্রীকে স্মরণে রেখেই মহতী এক উদ্যোগ নিলেন পেশায় সাংবাদিক দেবারুন রায়। নিজের জমানো কিছু টাকা তিনি দান করলেন একটি বৃদ্ধাবাসের উন্নতিকল্পে। দুর্গাপুরের 'বাদশা' নামের ওই বৃদ্ধাবাসে দেবারুন রায়ের প্রয়াত স্ত্রী শর্মিষ্ঠার স্মরণে একটি ছোট সভারও আয়োজন করা হয়েছিল।
কলকাতার নিউ টাউনের বাসিন্দা পেশায় সাংবাদিক দেবারুন রায়। তাঁর স্ত্রী শর্মিষ্ঠাও ছিলেন একজন সাংবাদিক। স্ত্রীর অকালমৃত্যু এক ঝটকায় জীবনটা যেন নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে দেবারুন রায়ের। গত ২১ জুলাই প্রয়াত হয়েছেন দেবারুন রায়ের স্ত্রী শর্মিষ্ঠা রায়। দেবারুনবাবু নিজে এক সময় আজকাল পত্রিকার হয়ে দিল্লি ব্যুরোর প্রধান পদের দায়িত্ব সামলেছেন। দিল্লিতেই দাপটের সঙ্গে সাংবাদিকতা করে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী শর্মিষ্ঠাও।
দেশ তো বটেই এমনকী বাংলাদেশের নানা পত্র-পত্রিকায় শর্মিষ্ঠাদেবীর প্রতিবেদন প্রকাশিত হতো। সাংবাদিকতার পেশা ছাড়াও আগাগোড়া গান গাইতে ভালোবাসতেন শর্মিষ্ঠাদেবী। খ্যাতনামা একাধিক শিল্পীর কাছে গানের তালিম নিয়ে সংগীত নিয়েই জীবন কাটাবেন ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষমেশ তা আর হয়নি। সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।
স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে স্বভাবতই মুষড়ে পড়েছিলেন দেবারুন রায়। তবে মনে-মনে ঠিক করেন স্ত্রীর স্মরণে শ্রাদ্ধের পর লোক খাওয়ানোর বদলে সেই টাকাই অন্য কোনও মহৎ কাজে তিনি ব্যয় করবেন। যেমন ভাবা ঠিক তেমনই কাজ। দুর্গাপুরের নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউয়ের ঠিকানায় রয়েছে বৃদ্ধাবাস 'বাদশা'। এই সংস্থাটির কর্ণধার দেবারুনবাবুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথা প্রবাসী ভারতীয় সুকুমার রায়।
দেবারুনবাবু ঠিক করেন এই 'বাদশা'-র আবাসিকদের জন্যই কিছু একটা করবেন তিনি। শেষমেশ দাদা নবারুণ রায়, ছেলে-ভাইপোকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন দুর্গাপুরের ওই বৃদ্ধাবাসে। নিজের জমানো কিছু টাকা তিনি তুলে দিয়েছেন বৃদ্ধাবাস কর্তৃপক্ষের হাতে। সেই টাকায় বৃদ্ধাবাসের সম্প্রসারণের কাজ হবে।
আরও পড়ুন- ‘ব্যাগ গোছানোর সময়ও যেন না পায়, এক কাপড়েই তুলে নিক’, অনুব্রতকে ধুয়ে দিলেন শুভেন্দু
প্রয়াত স্ত্রীর স্মরণে এমন বিরল একটি পদক্ষেপ প্রসঙ্গে সাংবাদিক দেবারুন রায় বলেন, ''গানটাই স্ত্রীর কাছে ওঁর জীবন ছিল। দিল্লিতে বাংলা গান করতো। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, গীতা দত্তদের গান গাইত। সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল। পরে সেপ্টিসেমিয়া হয়ে গিয়ে মাল্টিঅরগন্যার ফেলিওরে মৃত্যু। সমাজের জন্য কাজ করার ইচ্ছা ওঁরও ছিল। মৃত্যুর পর ওঁর চোখ দান করার ইচ্ছা ছিল। তবে সেপ্টিসেমিয়া হওয়ায় ওঁর চোখ আর প্রতিস্থাপনযোগ্য নয় বলে আমায় জানায় একটি সংস্থা। দাদা, ছেলে, ভাইপোদের সঙ্গে কথা বলেই বন্ধু সুকুমারের সংস্থার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই।''