Advertisment

মৃত্যুর আগে নগ্ন করে দৌড়, ‘গে’ তকমা, যাদবপুরে ব়্যাগিং অসুখ নতুন নয়, আর কী আছে অভ্যন্তরীণ তদন্তে?

কমিটি জানিয়েছে, নির্যাতিত ছাত্রটি প্রাথমিকভাবে সিনিয়রদের কথা অনুযায়ী গালিগালাজ করতে রাজি হয়নি। যার জেরে তাকে অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে কয়েকবার গালিগালাজ দিতে বাধ্য করেছিল নির্যাতনকারীরা।

IE Bangla Web Desk এবং Chinmoy Bhattacharjee
New Update
JU Ragging

১৭ বছর বয়সি ছাত্রটি ৯ আগস্ট তার দ্বিতীয় তলার হস্টেলের ঘরের বারান্দা থেকে পড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই মারা যায়। (এক্সপ্রেস ফাইল ছবি)

প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রকে নগ্নভাবে দৌড়তে বাধ্য করা। তাঁর গায়ে 'সমকামী' তকমা সেঁটে দেওয়া। মৃত্যুর আগে যৌন নির্যাতন করা। এই সব কিছুই উঠে এসেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কমিটির প্রতিবেদনে। যা বুঝিয়ে দিয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব়্যাগিংয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। আর, এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসের ভিতরে ব়্যাগিং রুখতে ব্যর্থ হয়েছে।

Advertisment

পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার বাসিন্দা ওই ১৭ বছর বয়সি ছাত্র গত ৯ আগস্ট হস্টেলে তাঁর দ্বিতীয় তলার কক্ষের বারান্দা থেকে পড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই মারা যায়। কমিটি এই ঘটনায় ৩৫ সিনিয়র ছাত্র এবং ৬ প্রাক্তন/অনুমোদিত আবাসিককে চিহ্নিত করেছে। অভিযোগ, এই অভিযুক্তরা কলকাতার অন্যতম নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হস্টেলে 'র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িত'। এছাড়াও, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার সিনিয়র ছাত্র এবং ছয় প্রাক্তন ছাত্রকেকে, ব়্যাগিংয়ে অভিযুক্ত হিসেবে কমিটি চিহ্নিত করেছে।

কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৯ আগস্ট সন্ধ্যার ঘটনাগুলো ১৭ বছর বয়সি ওই ছাত্রকে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছিল। তদন্তের পর রিপোর্টে বলা হয়েছে, '৯ আগস্ট রাতে একদল সিনিয়র এবং প্রাক্তন ছাত্র নির্যাতিত ছাত্রকে তাঁর সহপাঠীদের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় র‌্যাগিং করেছিল। প্রচণ্ড যৌন নির্যাতন করেছিল। সিনিয়রদের ভিড়ের মধ্যে ওই পড়ুয়াকে নগ্ন হয়ে প্যারেড করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তার গায়ে সমকামী তকমা সেঁটে দেওয়া হয়েছিল।'

রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'ভুক্তভোগীর প্রকৃত পতনের ঘটনার চূড়ান্ত প্রমাণ না-পাওয়া গেলেও, পতনের জন্য নিম্নলিখিত সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। মর্মান্তিক ঘটনার একটি মামলা, একটি হত্যামামলা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নির্যাতিতকে আর ৬-৭ জন নতুনের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এ-টু ব্লকের ৫৯ নম্বর কক্ষে। সেখানে সিনিয়ররা নবীনদের পার্শ্ববর্তী পুলিশ কোয়ার্টারের মহিলা বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর, যৌনতাসূচক বাক্য চিৎকার করে বলতে বাধ্য করেছিল। নির্যাতিত প্রাথমিকভাবে এই ধরনের অপমানজনক শব্দ উচ্চারণ করতে চায়নি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সিনিয়রদের চাপে বাধ্য হয়েছিল।'

আরও পড়ুন- ডিএলএইড কলেজে ভর্তি: স্বচ্ছ্বতা আনতে মরিয়া পর্ষদের কী পদক্ষেপ?

তদন্ত রিপোর্টে জানা গিয়েছে, নির্যাতিত প্রাথমিকভাবে গালিগালাজ করতে চায়নি। তার জেরে অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে তাকে বেশ কয়েকবার গালিগালাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল বলেই কমিটি জানিয়েছে। এই ব্যাপারে কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তদন্তে জানা গিয়েছে যে ওই ঘটনায় নির্যাতিত আক্ষরিক অর্থেই ভেঙে পড়েছিল। সে কেঁদে উঠেছিল। তার প্রেক্ষিতে সিনিয়রা নির্যাতিতকে পুলিশের ভয় দেখিয়েছিল। বলেছিল যে, পুলিশ কোয়ার্টারের দিকে তাকিয়ে আপত্তিজনক কথা বলায় নির্যাতিতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিপোর্টে জানা গিয়েছে, এই সময় নির্যাতিত খুব ভয় পেয়ে কেঁদে উঠেছিল। প্রায় একইসঙ্গে সে পেটে ব্যথা বোধ করেছিল। আর, পেট চেপে বসে পড়েছিল। সেই সময় তাঁকে একজন সিনিয়র একটি অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট খেতে দিয়েছিল। এরপর কয়েকজন সিনিয়র তাঁকে অন্য একটি ঘরে নিয়ে গিয়েছিল।

Ju Student Death Ragging Arrest kolkata police Jadavpur University
Advertisment