যাদবপুরে র্যাগিং তত্ত্বেই সিলমোহর খোদ রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুর। রাজ্যের পাঁচতারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের জেরেই প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে এদিন কার্যত মেনে নিলেন রেজিস্ট্রার। ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়েছেন তিনি। পড়ুয়াদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরদারি আরও বাড়ানোর আশ্বাস স্নেহমঞ্জু বসুর। 'র্যাগিং-মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যাদবপুরকে।' সংবাদমাধ্যমে এদিন বলেছেন রেজিস্ট্রার।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মর্মান্তিক পরিণতিতে রাজ্যের শিক্ষাজগতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। নদিয়ার বগুলা থেকে রাজ্যের স্বনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে এসেছিলেন ছাত্র। অভিযোগ, সিনিয়রদের র্যাগিংয়ের শিকার হতে হয় তাঁকে। হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাঁকে জেরা করেই গ্রেফতার করা হয় মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্ত নামে আরও দুই পড়ুয়াকে। এঁরাও তাঁকে হেনস্থায় সমানভাবে যুক্ত ছিল বলে মনে করছে পুলিশ। তবে এঁরা ছাড়াও আরও কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রেরও এই কাণ্ডে যোগ রয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের।
আরও পড়ুন- স্বপ্নদীপের মৃত্যু রহস্যে নয়া মোড়! ‘চিঠি’-তে উল্লেখ ‘রুদ্র দা’ আসলে কে?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগ এবার মেনে নিয়েছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। তিনি এদিন বলেন, 'দোষীরা যেন শাস্তি পায়। এই ধরনের র্যাগিংয়ের ঘটনা আর যাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে না ঘটে। এবার নজরদারি আরও বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমাদের নিউ বয়েজ হস্টেলেও যাব। ওখানে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলব। নিরাপত্তারক্ষীদেরও নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেব। এটাই আমার প্রথম কর্তব্য।'
আরও পড়ুন- স্বপ্নদীপ-মৃত্যুতে ধৃত মনোতোষ, যাদবপুরের মেধাবী ছাত্রের গ্রেফতারিতে কী বললেন বাবা-মা?
লিখিতভাবে অভিযোগ না এলে র্যাগিংয়ের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করাটা সমস্যার হয় বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। তাঁর কথায়, 'এর আগে ছাত্ররা ভয়ে হোক বা যে কোনও কারণেই হোক কারও নাম নিয়ে আমাদের কাছে র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ না এলে তো কোনও ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি না। তবে অভিযোগ এলে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। তবে এবার যদি তাঁরা মুখ খোলে আমাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।'
আরও পড়ুন- স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর যাদবপুরের হস্টেল ছেড়েছেন কার া কারা? পুলিশের আতচকাচে আবাসিকরা!
যাদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা নিয়ে গোটা শিক্ষাজগতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। সর্বত্র ওই পড়ুয়ার এই অকালে চলে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিমা এতে ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এপ্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার বলেন, 'একটা প্রশ্নের মুখে আমরা পড়ে গেলাম। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক একটা ব্যাপার। একটা পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা ঘটে গেল। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। র্যাগিংমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলব যাদবপুরকে।'
এদিকে, যাদবপুরে প্রথম বর্ষের ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে এদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেশ কয়েকটি মিছিল হয়। একদিকে AISA-এর বিক্ষোভ মিছিল থেকে তৃণমূল বিরোধী স্লোগান ওঠে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দ ভবনের সামনে থেকে এদিন মিছিল করেন তৃণমূলপন্থী শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়ারা।