Jalpaiguri Storm: কোথাও উপড়ে পড়া গাছের নীচে আটকে মানুষের মৃতদেহ। কোথাও আবার ধূলিস্যাৎ আস্ত একটি গ্রাম। জলপাইগুড়ি এবং ময়নাগুড়ির বিধ্বংসী এই ছবি দেখার পর মানুষের মনে প্রশ্ন, এ কোন ঝড়? মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত কিছু লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া সাধারণ ঝড় হতে পারে কী? রবিবারের ঝড়ের যে চরিত্র দেখা গিয়েছে, তা নিশ্চিত ভাবেই টর্নেডো (Tornado) , এমনই মনে করছেন অনেকে।
টর্নেডো হওয়ার ক্ষেত্রে যে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হয়, সমস্ত কিছুই এই সময়কালে দেখা গিয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পের জোগান রয়েছে, উত্তরবঙ্গের (North Bengal) উপর ঘূর্ণাবর্ত অবস্থান করছে এবং হঠাৎই তাপমাত্রার বৃদ্ধি ঘটছে। ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হতে বেশি সময় লাগেনি। আবহাওয়া দফতরের তরফেও বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টির জেরে শিলাবৃষ্টি এবং ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি হলেই কি টর্নেডো হয়? রবিবার বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি যেমন হয়েছে, তেমনই তার উচ্চতা এতটাই বেশি ছিল যে হিমাঙ্কের নীচে চলে যাওয়ায় মেঘের মধ্যে বড় ধরনের শিল তৈরি হয়। মেঘের মধ্যে টর্নেডোর শর্ত মেনে তার মধ্যে ঘূর্ণি সৃষ্টি হয়েছে। তাই শিলাবৃষ্টি হওয়ার পর প্রবল বেগে টর্নেডোর আছড়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি।
জলপাইগুড়ি শহর এবং ময়নাগুড়িতে যে বিধ্বংসী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে টর্নেডোর মতোই ন্যারো স্ট্রিপ দিয়ে অর্থাৎ সামান্য একটা অংশ দিয়ে ঝড়টি (Storm) প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়েছে। টর্নেডো যেমন প্রবাহিত হওয়ার পথে জলীয় বাষ্প পেয়ে গেলে শক্তি সঞ্চয় করে নেয়, রবিবারও হয়েছিল তাই। একারণেই জলপাইগুড়ি শহরের থেকে ময়নাগুড়িতে বিধ্বংসী ছবিটা ভয়ঙ্কর। অর্থাৎ তিস্তা (Teesta) নদী থেকে থেকে জলীয় বাষ্প পেয়ে যাওয়ায় টর্নেডোর তীব্রতা বেড়ে গিয়েছিল। একমাত্র টর্নেডোর ক্ষেত্রেই শ'য়ে শ'য়ে বাড়ির চাল উড়ে যেতে পারে। গতকালও হয়েছে তাই।
আবহাওয়া দফতরের সিকিমের (Sikim) কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলছেন, ‘আমরা সমস্ত জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখার পর বোঝা সম্ভব হবে কী ধরনের ঝড় ছিল। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে মিনি টর্নেডো।’
উল্লেখ্য, স্বাভাবিক নিয়মে টর্নেডোর পর ক্ষতিগ্রস্ত এবং আশপাশ এলাকায় প্রবল ভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে যায়। সোমবার স্বাভাবিকের থেকে তাপমাত্রা ৫-৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবারের ঘটনা কিন্তু উত্তরবঙ্গে প্রথম নয়। ২০২২ সালে এমনই টর্নেডোর মুখে পড়েছিল ডুয়ার্সের (Dooars) বড় একটা অংশ। ওই বছর গোরুবাথান, টুনবাড়ি এবং মেটেলি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।