প্রাথমিকের পোস্টিং দুর্নীতির তদন্তে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে তোলপাড় কাণ্ড। মঙ্গলবার রাতেই অপসারিত পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে জেরা করতে প্রেসিডেন্সি জেলে পৌঁছেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এরপর বুধবার সকাল থেকে মানিককে দফায় দফায় জেরা চলে। এসবের মধ্যেই এদিন হাইকোর্টে ফের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। হাইকোর্টের তরফে শিক্ষা দফতরের সচিবকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন মধুসূদন ভট্টাচার্য। তিনি মেমারির তৃণমূল বিধায়কও।
এর আগে শিক্ষকের স্থানান্তর সংক্রান্ত একটি মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল যে, পূর্ব বর্ধমান জেলা শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে আদালতে হলফনামা জমা দিতে হবে। কিন্তু চেয়ারম্যানের পরিবর্তে পর্ষদের একজন আপার ডিভিশন ক্লার্ক এই হলফনামা জমা দেওয়ায় চরম অসন্তুষ্ট হয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই কারণে পর্ষদ চেয়ারম্যানকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
কেন নিজে না গিয়ে আপার ডিভিশন ক্লার্ক-কে দিয়ে হলফনামা জমা করানো হয়েছে? জবাবে মধুসূদন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, তিনি করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তিনি নিজে না গিয়ে অন্য একজন পর্ষদ কর্মীকে দিয়ে হলফনামা জমা করেছেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাও করে নেন তৃণমূল বিধায়ক।
বিধায়ক তথা র্বর্ধমানের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান মধুসূদনের বক্তব্য শুনে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'অসুস্থ হলে পদত্যাগ করুন। অন্য লোক কাজ করবেন। আমি মনে করি আপনি শারীরিকভাবে এই পদে কাজ করতে অপারগ।' এরপরই পর্ব বর্ধমানের জেলা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশের দেন বিচারপতি। পাশাপাশি শিক্ষাসচিবকে আদালতের নির্দেশ কার্যকরে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে বলেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দিল্লি থেকে দুপুরে কলকাতায় ফিরে বিমানবন্দরে তিনি বলেন, 'বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রণম্য। আমি আমার রাজনৈতিক পরিচয় সরিয়ে বলছি, উনি সমাজ সংস্কারক। তাঁর একের পর এক নির্দেশ বঞ্চিত হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীদের আশার আলো দেখাচ্ছে। শুধু চাইব দোষীদের শাস্তি হোক।'
মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত নয়া মামলায় অবিলম্বে ইডি ও সিবিআইকে যুক্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এক ঘণ্টার মধ্যে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিককে আদালতে হাজির হওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি পরিকল্পতি অপরাধা। প্রাক্তন পর্ষদ সচিব মানিক ভট্টাচার্য পরিকল্পনা করে এই অপরাধ করেছেন।’ আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার রাতেই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে গিয়ে মানিককে জেরা করে সিবিআই আধিকারিকরারা।
এসএসসি নিয়োগ মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ উঠেছে। সেই নিয়েই গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে হুঁশিয়ারির সুরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘যথাযথভাবে তদন্ত না হলে আমি সহ্য করব না। প্রয়োজন হলে গোটা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাব।’