প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির তদন্তকারী অফিসার মিথিলেশ কুমার মিশ্রকে তদন্ত থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তাঁর জায়গায় নতুন অফিসারকে দায়িত্বে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশে উল্লেখ রয়েছে যে, ইডির ডিরেক্টরকে ৩ অক্টোবরের তদন্ত নিয়ে উপযুক্ত অফিসারকে পদক্ষেপ করতে বলতে হবে। তদন্তের স্বার্থে যে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারবে ইডি।
আগামী ৩ অক্টোবর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে ইডি। সেই বিষয়েও কারও নাম না করে বিচারপতির নির্দেশ, ৩ অক্টোবর যে সমন পাঠানো হয়েছে, তা যেন কোনওভাবেই নড়চড় না হয়।
ইডির অফিসার মিথিলেশ কুমার মিশ্রকে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সম্প্রতি ভর্ৎসনা করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। বিচারপতি সিনহার প্রশ্ন ছিল, এই ধরনের তদন্ত করার জন্য কি ওই ইডি অফিসারের প্রশিক্ষণ রয়েছে? তিনি কি আসলে এই তদন্ত থেকে অব্যহতি চাইছেন? তাঁর কি মনে হচ্ছে, আরও তদন্তকারী অফিসার প্রয়োজন?
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার পর্যবেক্ষণ, 'আইও (ডেপুটি ডিরেক্টর মিথিলেশ কুমার মিশ্র) আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন। তাই তাঁকে শুধু এই মামলা নয়, এই রাজ্যের কোনও মামলাতেই রাখা যাবে না।' তাঁর নির্দেশ দ্রুত কার্যকরের জন্য ইডির ডিরেক্টরকে নির্দেশ পাঠিয়েছে হাইকোর্ট।
এরপরই এদিনের শুনানিতে ইডির অফিসার মিথিলেশ কুমার মিশ্রকে সরিয়ে দিলেন বিচারপতি সিনহা।
কেন ওই অফিসারকে নিয়ে সন্দিহান বিচারপতি?
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস এবং ওই সংস্থার সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, এছাড়া ওই সংস্থার ডিরেক্টরদের সম্পত্তি নিয়ে ইডির কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। গত ২৫ সেপ্টেম্বর আদালতে ইডির সেই রিপোর্ট জমা করেছিল। যা অসম্পূর্ণ বলে মন্তব্য জানিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। রিপোর্টের কোথায় দুর্বলতা তা তুলে ধরে ওই দিনই ইডির অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর মিথিলেশ কুমার মিশ্রকে ভর্ৎসনা করেছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। বিচারপতি সিনহা ইডি-র অফিসারকে বলেছিলেন, 'আপনাদের তদন্তের ট্রেনিং আছে তো? নাকি এই তদন্ত থেকে আপনি অব্যহতি চান? আমি কেমন যেন একটা গন্ধ পাচ্ছি। আমার তো সন্দেহ যে আপনারাই তথ্য গোপন করছেন।'
ওই শুনানিতে ইডির অফিসারের কাছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির খতিয়ান সম্পর্কে হাইকোর্টে ইডির পেশ করা রিপোর্ট নিয়ে বিচারপতির সিনহার প্রশ্ন ছিল, 'একজন সাংসদের কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। শুধুমাত্র তিনটি বিমা? তাহলে বেতন জমা পড়ে কোথায়?'
সূত্রের খবর, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টরদের সম্পত্তির খতিয়ান সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এ দিন আদালতে জমা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। কিন্তু এদিন ওই সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আদালতে জমা পড়েনি। এতেই অসন্তুষ্ট বিচারপতি সিনহা। শেষপর্যন্ত তদন্তে ঢিলেমির কারণে প্রাথমিকে নিয়োগ মামলার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল আইও মিথিলেশ কুমার মিশ্রকে।
আরও পড়ুন- ৩ অক্টোবর ইডি’র তলব: ফের চাঁচাছোলা অভিষেক