ইডি হেফাজতে জ্যোতিপ্রিয়
আগামী ৬ই নভেম্বর পর্যন্ত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। যা শুনেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সওয়াল জবাবের সময় দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দেখা যায় আচমকা বসে পড়েন তিনি। জ্ঞান হারান ধৃত মন্ত্রী। জ্যোতিপ্রিয়র কাছে যান তাঁর কন্যা। পুলিশ এগিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসা মন্ত্রীকে ওই অবস্থাতেই তাঁকে বাইরে নিয়ে আসে পুলিশ। আদালত কক্ষের বাইরে তাঁকে একটি বেঞ্চে বসানো হয়।পরে বিচারকের বাতানুকূল চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। আনা হয় কলকাতা পুলিশের অ্যাম্বুলান্স।
সন্ধ্যা সওয়া ছটা নাগাদ ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে বের করা হয় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। এসি অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই আপাতত ধৃত মন্ত্রীর চিকিৎসা হবে।
চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশ
বিচারক নির্দেশ উল্লেখ করেন, চিকিৎসার জন্য বালুকে কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দিনে একবার করে মন্ত্রীকে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে। বাড়ি থেকেই খাবার পাবেন তিনি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মন্ত্রীর চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে হবে।
আদালতে কী জানালেন জ্যোতিপ্রিয়?
সুগার আক্রান্ত জ্যোতিপ্রিয় জেরা-জিজ্ঞাসাবাদ-গ্রেফতারি পর্বের মাঝে ইনসুলিন নিতে পারেননি বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রীর আইনজীবী। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পা ফুলে থাকা সহ অসুস্থতার কথা জানিয়ে দাবি করেন জামিনের। এর মাঝেই ব্যাঙ্কশাল আদালতে চলতে থাকা শুনানি পর্বে সোজা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেন বিচারক। জানতে চান, তাঁকে কি শারীরিকভাবে কেউ অত্যাচার করেছে? বিচারকের যে প্রশ্নের উত্তরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, 'না'। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, ইডি-র আধিকারিকরা এখনও পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছেন। তবে সকালে কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে নিজের গ্রেফতারিকে 'গভীর ষড়যন্ত্র' বলে দাবি করেছিলেন বনমন্ত্রী।
কীভাবে কালো টাকা সাদা?
ইডি সূত্রে খবর, তিনটি ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে ১২ কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। জেরার সময় নাকি একথা স্বীকার করে নিয়েছেন বাকিবুর রহমান। জানা গিয়েছে, জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিকের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেটি সেটিফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
২১ ঘন্টা জেরার পর গ্রেফতার বালু
শুক্রবার ভোররাতে গ্রেফতার করার পর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে প্রথমে সিজিও কমপ্লেক্সের দফতরে নিয়ে যায় ইডি। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জোকা ইএসআই হাসপাতালে। ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। পরে হাসপাতাল থেকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
সূত্রের খবর, রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় আগেই ধৃত বাকিবুর রহমানকে জেরায় যে তথ্য উঠে এসেছে সেই সব তথ্য আদালতে আবারও পেশ করতে পারে ইডি। বাকিবুরের পাহাড় প্রমাণ সম্পত্তি গড়ে ওঠার পিছনে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিশাল ভূমিকা থাকার অভিযোগ প্রতিষ্ঠায় চেষ্টায় কোনও খামতি রাখতে চায় না কেন্দ্রীয় সংস্থা। আইনজীবীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা তদন্তকারী অফিসারদের।
আরও পড়ুন- শ্রীঘরে জ্যোতিপ্রিয়, বড় আশঙ্কা দিলীপের! তোলপাড় ফেলে কী বললেন?
উল্লেখ্য, একটানা ২১ ঘণ্টা বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর শুক্রবার ভোররাতে রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। এই মামলায় আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ বাকিবুর রহমনাকে। বাকিবুরের ১০০ কোটির সম্পত্তির খোঁজ পায় ইডি। দুবাই, বাংলাদেশে ব্যবসা রয়েছে বাকিবুরের। তাকে দফায় দফায় জেরা করেই রেশন বণ্টন দুর্নীতির সঙ্গে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন- ‘এবার হয়তো জেলেই মন্ত্রিসভার বৈঠক’, হেভিওয়েট নেতার কথায় তুঙ্গে চর্চা!
'গভীর যড়যন্ত্র'
যদিও তাঁর গ্রেফতার হওয়ার পিছনে 'ষড়যন্ত্র' রয়েছে বলে মনে করেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এদিন গ্রেফতার হওয়ার পর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘আমি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার’। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরনোর পথে তাঁর মুখে শোনা যায়, ‘বিজেপি ও শুভেন্দু অধিকারীর ষড়যন্ত্র’। যদিও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এই অভিযোগের পাল্টা টিপ্পনি কেটেছেন বিরোধী দলনেতাও।
আরও পড়ুন- কাদের ‘ষড়যন্ত্রে’ গ্রেফতার? নাম বলে বলে ‘চিল চিৎকার’ ক্ষুব্ধ জ্যোতিপ্রিয়র!
শুভেন্দুর কটাক্ষ
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি ইনফো-কার্ড পোস্ট করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। ইনফো কার্ডের উপরে তিনি লিখেছেন, “এরপর হয়তো মন্ত্রিসভার বৈঠক ও বিধানসভার অধিবেশন জেলের মধ্যে ডাকতে হবে।” ইনফো কার্ডটিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচতার্য, জীবনকৃষ্ণ সাহার পর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারির তারিখ উল্লেখ করেছেন বিরোধী দলনেতা।
আরও পড়ুন- ইডির গ্রেফতারিতে ঘুরে ফিরে সেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, আসলে কোন দিকে ইঙ্গিত জ্যোতিপ্রিয়র?