পুজোর পরেই বড় ধাক্কা তৃণমূলের। গ্রেফতার করা হল রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। শুক্রবার ভোররাত ৩টে ২৩ মিনিটে তাঁকে গ্রেফতার করে সিজিও কমপ্নেক্সে নিয়ে যান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আধিকারিকরা। বাড়ি থেকে সিজিও কমপ্লেক্সে যেতে সময় লাগে ১০ মিনিট। গ্রেফতারের পর প্রতিক্রিয়ায় ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, 'আমি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার'। সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়েও মন্ত্রী একই কথা বলেন। তবে, কে তাঁর বিরুদ্ধে কী ষড়যন্ত্র করেছেন, তা স্পষ্ট করেননি ধৃত মন্ত্রী।
এর আগে ২১ ঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি। বৃহস্পতিবার ভোর ছটায় তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। তার পর থেকে চলে ম্যারাথন তল্লাশি। বাড়ির বাইরে ভিড় করেছিলেন বহু মানুষ। তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় বিধাননগর উত্তর থানাকে জানায় ইডি। সেই মতো পুলিশ এসে এলাকায় ব্যারিকেড করে ঘিরে দেয়। এ বিষয়ে মন্ত্রীর বাড়ির ভিতরে গিয়ে ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। তার পরেই মন্ত্রীর বাড়ির সামনে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। রাতে আসে বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনীও। তার মধ্যে বাড়ির এক তলার দরজা দিয়ে এক বার মুখ বার করতে দেখা যায় বালুকে। তাঁর চোখে চশমা নেই। তাঁকে আপাত ভাবে দেখে ‘বিধ্বস্ত’ মনে হলেও ইডির সূত্রে খবর, মন্ত্রী ভাল আছেন।
সল্টলেকের বিসি ব্লকে পাশাপাশি তাঁর দু’টি বাড়িতে (বিসি ২৪৪ এবং বিসি ২৪৫) চলেছে তল্লাশি। পুজোর আগেই রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে। দীর্ঘ জেরার পর বাকিবুরের সঙ্গে এই দুর্নীতিতে প্রভাবশালীরাও জড়িত বলে জানতে পারে ইডি। কে এই প্রভাবশালী? তা জানতে তদন্তের গতি বাড়ান গোয়েন্দারা। ইডি সূত্রে খবর, রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারির পরেই নাম উঠে এসেছে জ্যোতিপ্রিয়র।
এদিকে, বনমন্ত্রীর বাড়িতে ইডির অভিযানকে ডার্টি গেম’ বলে মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি। এবার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পুজো সবে শেষ হয়েছে। জেলায় জেলায় আজ কার্নিভাল রয়েছে। সবাই বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। তার মধ্যেই মন্ত্রীদের বাড়িতে হানা দিতে নেমে পড়েছে। প্রত্যেকদিন আমাদের সব মন্ত্রীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করছে। তাহলে সরকারটা বাকি থাকে কেন? এটা ডার্টি গেম। এ ভাবে মুখ বন্ধ করা যাবে না।সুপ্রিম কোর্ট বলেছে উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কোনও তদন্ত ও তল্লাশি হতে পারে না। তাও গায়ের জোরে কেন্দ্র এটা করাচ্ছে। তল্লাশির নামে শাড়ি, সাজগোজের জিনিসের ছবি তুলছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পরিচয়।’
তাঁর প্রশ্ন কেন, ‘একটাও বিজেপির ডাকাতের বাড়িতে তল্লাশি হচ্ছে না?’ মমতা বললেন, ‘আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে বলছি বলে এক একটা মন্ত্রীর বাড়িতে প্রত্যেকদিন তল্লাশি শুরু করেছে। তাঁদের স্ত্রী, বাচ্চা, বাড়ির লোকদেরও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। এটা কি প্রতিহিংসা নয়? আমি মনে করি এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।’
এরপরই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে কড়া হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘বালুর হাই ব্লাড সুগার রয়েছে। তল্লাশির সময় ও যদি মারা যায়, তাহলে আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে এফআইআর করব।’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘সুলতান আহমেদের ঠিক এভাবেই মৃত্যু হয়েছিল। এজেন্সির নোটিস পাওয়ার পরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুলতান দা। একই কারণে আমাদের সাংসদ ও প্রাক্তন ফুটবলার প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীরও মৃত্যু হয়েছে। ওরা বাইরে এটা বলতে পারেননি।’