রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ইডি-র স্ক্যানারে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ইতিমধ্যেই তাঁকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডির গোয়েন্দারা। অভিজিতের বাড়িতে তল্লাশিতে মিলেছিল মেরুন ডায়েরি। সেখানে লেখা 'বালু দা' কে? তা নিয়েই আপাতত জোর জল্পনা। এসবের মধ্যেই দুর্নীতির দায় ঝেড়ে ফেলেছেন অভিজিৎ দাস। দাবি করেছেন, জ্যোতিপ্রিয়র নির্দেশেই তাঁর মা ও স্ত্রীকে মন্ত্রীর তৈরি কোম্পানিতে ডিরেক্টর করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে বের করে আনা হয় তাঁদের। এসবের মধ্যেই জানা গেল- শুধু মন্ত্রী পর্যন্ত নয়, অভিজিতের হাত ছিল বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফাতেও। কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপবিন্যাসের আসরে হাজির ছিলেন অভিজিতের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর তরফে ফিফা কংগ্রেসে ভারত থেকে তিনিই একমাত্র আমন্ত্রিত ছিলেন।
তার আগে ব্রাজিল, রাশিয়া বিশ্বকাপেও হাজির ছিলেন অভিজিৎ।
জানা গিয়েছে, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আপ্ত সহায়ক হিসেবে তিন বছর ছিলেন। ২০১১ থেকে ২০১৪ অবধি। ২০১৪ সালে তিনি আপ্ত সহায়কের পদ ছাড়েন। তাঁর মা ও স্ত্রীকে জ্যোতিপ্রিয়র সংস্থার ডিরেক্টর পদ থেকে সরাতে প্রথমে অসুবিধা হলেও পরে জোর করেই বের করে আনেন বলে দাবি করেছেন অভিজিৎ।
কীভাবে এত প্রভাব অভিজিৎ দাসের? সংবাদ মাধ্যমকে সেই সময় জ্যোতিপ্রিয় প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক জানিয়েছিলেন যে, তাঁর যে ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে তা স্পোর্টস ট্যুরিজমকে প্রোমোট করে। তাঁর সংস্থার মাধ্যমে দেশ-বিদেশের অনেকেই ফিফা বিশ্বকাপ দেখেছেন। দুবাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন তো বটেই, হায়দরাবাদ, পুনে, গোয়া, কলকাতা সহ ভারতেরও অভিজিতের সংস্থার প্রচুর ক্লায়েন্ট রয়েছেন।
আরও পড়ুন- জ্যেতিপ্রিয়র প্রাক্তন আপ্তসহায়ক বিসিসিআই’য়ের শীর্ষপদে! তদন্তের দাবি, ইডিকে চিঠি আরটিআই কর্মীর
ব্যবসার সূত্রেই এভাবেই ফিফা কর্তাদের কাছাকাছি চলে আসেন অভিজিৎ দাস। কাতার বিশ্বকাপের আগে সংবাদ মাধ্যমে অভিজিৎ দাবি করেছিলেন যে, দেশের ফুটবল ফেডারেশনের অনেক কর্তাই তাঁর মাধ্যমে বিশ্বকাপের আসরে পৌঁছেছিলেন। কারা সেইসব কর্তা? নাম বলতে চাননি অভিজিৎ।
অনেকেরই দাবি, সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার প্রাক্তন সহ সভাপতি সুব্রত দত্তের সঙ্গে দেশে-বিদেশে একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে অভিজিৎ দাসকে।
এছাড়া, অভিজিৎ দাসের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ এনেছেন সমাজ ও আইন গবেষক এবং আারটিআই কর্মী বিশ্বনাথ গোস্বামী। তিনি সরাসরি ইডির কাছে অভিযোগ করেছেন যে, ‘বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের মতো শিল্প সংস্থা সংগঠনের শীর্ষ পদে রয়েছেন অভিজিৎ দাস। বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের অন্যতম সদস্য গ্রেফতার মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক। একজন শিল্পপতি না হয়েও কি করে তিনি ওই সংগঠনে যুক্ত থাকেন। তাঁর পরিচালনাধীন সংস্থাগুলি আদৌ বাস্তবে কাজ করছে? কিভাবে সেই সব সংস্থা হস্তান্তরিত হয়েছে?’ তাঁর দাবি, ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এ বিষয়ে তদন্ত করলেই নতুন নতুন তথ্য মিলবে। যা রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় নয়া দিশা দেখাবে।’
এ বিষয়ে বিসিসিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে যে, বিশ্বজিত দাসের সংস্থা হার্মেস ভয়েজেস বিসিসিআইয়ের সদস্য। হার্মেস ভয়েজের সিআইএন নম্বর আছে। সংগঠনের এতে কিছু করার নেই। অভিজিৎ দাস একটা কর্পোরেট অফিসের ডিরেক্টর। ওটা রেজিস্টার্ড কর্পোরেট অফিস। এই সংগঠনে কোনও ব্যক্তিগত মেম্বার হয় না। সংস্থা অনুযায়ী সদস্য হয়।