এবার জেলেই পেটপুজোর আয়োজন। মুখ খুলতেই হাতে হাজির আমিষ থেকে নিরামিষের হরেক পদ। চাইনিজ থেকে ইন্ডিয়ান, হাজারো ডিশ- সব মিলবে। শুধু 'ন্যায্য মূল্য'টা পকেট থেকে খসালেই হল। ভাবছেন কোথায় পাবেন এমন জেল? যেখানে সাদার মাঝে-কালো ডোরা পোশাকের কয়েদি আর খাঁকি উর্দিপরা রক্ষীর বদলে দেখা মিলবে লোভনীয় সব খাবারের!
Advertisment
জানতে হলে বরং চলেই আসুন রিষড়ায়। হুগলি শিল্পাঞ্চলের বর্ধিষ্ণু এই এলাকায় স্টেশন থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে দেখা পাবেন এই জেলখানার। পোশাকি নাম 'কয়েদ-ই-রসুই'। ছোট্ট রেস্তোরাঁ। বাইরে থেকে আন্দাজ করা যায়। কিন্তু, ভিতরের চেহারাটা পুরোপুরি বুঝতে এই রেস্তোরাঁর ভিতরে ঢুকতেই হবে। আর ঢুকলেই মনে হবে, রেস্তোরাঁ না। সোজা জেলখানায় চলে এসেছেন। গারদ থেকে হাতকড়া, সবই আছে। তারই মধ্যে ছডা়নো কয়েকটি টেবিল-চেয়ার। যেখানে চুটিয়ে আড্ডা, সঙ্গে গরম খানাপিনার স্বাদ নিচ্ছেন সুবেশা তরুণ-তরুণীরা।
সম্প্রতি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিত্যক্ত জেলে রাত্রিবাসের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যেখানে অর্থের বিনিময়ে জেলের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারছেন যে কেউ। অনেকটা সেই ধারণা কাজে লাগিয়েছেন এই রেস্তোরাঁর মালিক। নিজে বন্ধুর রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। পরে রেস্তোরাঁর কাজে জাপান গিয়েছিলেন। তখন থেকেই মনে নিজের রেস্তোরাঁ তৈরির ইচ্ছা জেগেছিল। জাপানেও এমন ধরনের রেস্তোরাঁ আছে। অবিকল তেমনই বানিয়ে নিয়েছেন রিষড়ার বুকে।
দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা খোলা তাঁর 'কয়েদ-ই-রসুই'। ছেলের এই অভিনব ভাবনায় বেশ মজা পেয়েছেন রামগুপ্ত শর্মা। পরিবহণ দফতরের প্রাক্তন কর্মী, আগে থাকতেন বেলুড়ে। সেখান থেকে বছর দশেক আগে সপরিবারে উত্তরপাড়ায়। পরিচিতের সূত্রে রিষড়ার জমিটা মিলেছিল। আর, তারপর এই 'কয়েদ-ই-রসুই'। জাপান ফেরত বড় ছেলে যখন সময় পায় না, নিজে এসে দেখভাল করেন অভিনব রেস্তোরাঁর।
তবে, তাঁর এই কয়েদখানায় কেউ ব্রাত্য নন। সরকারি অফিসার থেকে পুলিশকর্মী বা রাজনীতিবিদ, সবাই স্বাগত। ক্রেতার কী পেশা, তা নিয়ে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। বরং, ক্রেতা তাঁর কাছে ভগবান। এলেই রেস্তোরাঁর ১০-১২ জন কর্মী প্রস্তুত। কোন খাবারে কোন ক্রেতার মন ভজবে, সেটাই 'কয়েদ-ই-রসুই'য়ের লক্ষ্য। এখানকার অবিকল কারাগারের মত দেখতে দরজা থেকে ঝোলানো হাতকড়া যেন ক্রেতাদের জন্যই। এই হাতকড়া অবশ্য শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়। সুখাদ্যের বন্ধনে ক্রেতাদের বেঁধে ফেলার প্রতীক।