Advertisment

মহাকালের ভৈরবী হিসেবে পূজিত হন মা আনন্দময়ী, মন্দিরের ইতিহাস চমকে দেওয়ার মতো

এই মন্দিরের সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে মিল রয়েছে দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী মন্দিরের।

author-image
Anurupa Chakraborty
New Update
Goddess Anandamoyee Temple

মা আনন্দময়ীর মন্দির।

সুখারিয়া গ্রামের মাঝে এমন এক অদ্ভুত নিদর্শন মিলবে, এ যেন ভাবনার অতীত। হুগলি জেলার সোমড়া অঞ্চলের মা আনন্দময়ীর মহিমা বেশ অবাক করার মতো। মহাকালী পূজিত হন ভৈরবী হিসেবে। সম্পূর্ণ টেরাকোটার মন্দিরে মায়ের আদল একেবারেই জগৎজননী স্বরূপ। 

Advertisment

১১৭০ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতে মায়ের প্রতিষ্ঠা হয়। তবে কোনওবারই দীপান্বিতা কালীপুজোর দিন খামতি থাকে না মায়ের আরাধনায়। সকাল থেকেই ব্যস্ততা ঘিরে থাকে মন্দির প্রাঙ্গণে। কথায় বলে, মা আনন্দময়ীর তিন বোন অর্থাৎ নিস্তারিণী এবং হরসুন্দরী কয়েক কিলোমিটার জায়গার মধ্যেই তাদের স্থাপনা করা হয়। তবে আনন্দময়ী মায়ের প্রতিষ্ঠাতা জমিদার শ্রী বীরেস্বর মিত্র মুস্তাফি। স্বপ্নাদেশ পেয়েই কষ্ঠি পাথরের এই মূর্তি গঙ্গার ধারেই সম্পূর্ণ আড়ম্বরে স্থাপন করেন তিনি। তবে আনন্দময়ীর মূর্তিতে রয়েছে বিশেষত্ব, তিনি ভৈরবী এবং পঞ্চমুণ্ডের আসনে মহাদেবের উপর অধিষ্ঠিতা। 

publive-image
আনন্দময়ী কালী মন্দির - এক্সপ্রেস ফটো

তবে ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে অনেক কিছুই জানা যায়। এই মন্দিরের সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে মিল রয়েছে দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী মন্দিরের। আদল থেকে মন্দিরের গঠন বেশ কিছুটা এক। জনশ্রুতি রয়েছে, কাশী যাত্রার সময় নাকি রানি রাসমণি গঙ্গাবক্ষে এই স্থান দিয়েই যাত্রা করছিলেন। একঝলকেই এই মন্দির মনে ধরে তাঁর। শুরুতেই পঞ্চরত্নের মন্দির এবং দুই দিকে মহাকাল পাহারায় ঘিরে রেখেছেন মা আনন্দময়ীকে। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে এমন সুনিপুণ টেরাকোটার মন্দির হাতে গুণে পাঁচটি মেলে। পার্থক্য রয়েছে মন্দিরের চুড়া প্রসঙ্গেও, ২৫টি চূড়া বেষ্টিত এই মন্দির একেবারেই দূর থেকে তখন দেখা যেত। 

publive-image
মাতৃ মূর্তি - এক্সপ্রেস ফটো

মন্দিরের বর্তমান সেবায়িত জানান, মায়ের কাছে মনোবাঞ্ছা নিয়ে এলে কোনওভাবে খালি হাতে ফিরে যাবেন না কেউই। তাঁর অপার করুণা। সচরাচর মহাদেবের উপর আসনে অধিষ্ঠিত দেবীর দেখা মেলে না। প্রতিদিনের নিত্যসেবাতেও ত্রুটি নেই। সকাল এবং সন্ধেয় আরতি, মায়ের পূজার্চনায় খামতি থাকে না একেবারেই। 

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো

ঘটনার সত্যতা প্রসঙ্গেই ইতিহাসবিদ বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "জমিদার দক্ষিণা রায়ের প্রতিষ্ঠিত শিব দক্ষিণেশ্বরের নামের সাপেক্ষেই জায়গার নাম পরিবর্তিত হয়।" তবে আদৌ আনন্দময়ীর মন্দিরের সঙ্গে এই তথ্য কতটা যুক্তিযুক্ত সেই প্রসঙ্গেই বলেন, "বইয়ের পাতায় সরাসরি এর উত্তর লেখা না থাকলেও জানা যায়, ১৮৫০-র দিকে রানিমা গঙ্গাভ্রমণের কারণেই মাঝেমধ্যে এইদিকে যাত্রা করতেন। বজরায় করে যাত্রাকালে তাঁর নজরে আসা খুব স্বাভাবিক এই মন্দির। কিছু হলেও সত্যতা থাকতেই পারে।"

গ্রামের বাসিন্দা রাজু মোদকের বক্তব্য, "এই জায়গা ভীষণ মাহাত্ম্যপূর্ণ। মায়ের মুখ দেখলেই দিন ভাল না গিয়ে উপায় নেই। প্রচুর মানুষ মায়ের উদ্দেশ্যে ফুল না দিয়ে জল স্পর্শ করেন না।" পাশের পুকুরেই নাকি আছে সোনার নোলক পড়া মাছ, এবং এটি নাকি মন্দিরের সমৃদ্ধির প্রতীক। হাজারো ইতিহাস নিয়ে গ্রাম গ্রামান্তরে ছড়িয়ে আছে মায়ের নানান ইতিহাস। সত্যিই চমকে দেওয়ার মতোই।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Kali Puja Kali Temple
Advertisment