আজ কালী পুজো! কলকাতা থেকে শুরু করে কামাখ্যা দিকে দিকে শক্তির আরাধোনা। সকাল থেকে মন্দিরে মদিরে ভক্তদের বিরাট লাইন। তারাপীঠ থেকে দক্ষিণেশ্বর, নৈহাটি থেকে বারাসাত সেজে উঠেছে আলোর উৎসবে। গত ২ বছর করোনার দাপটে কালী পুজোর আনন্দ সেভাবে উপভোগ করতে পারেন নি মানুষজন। চলতি বছর করোনার দাপট কমতেই শক্তির আরাধনায় মেতে উঠেছেন মানুষজন। আলোর উৎসবে মাতোয়ারা তিলোত্তমা কলকাতাও। দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোতেও থিমের হিড়িক।
তারাপীঠ, কঙ্কালীতলা
কালীপুজোর সকাল থেকেই তারাপীঠে উপচে পড়ছে ভক্তদের ভিড়, রাতভর খোলা থাকবে মন্দির। আজ দীপান্বিতা কালীপুজো। প্রতি বছরই প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় তারাপীঠের মন্দিরে। নিত্যপুজোর পাশাপাশি শ্যামা রূপে মায়ের আরোধনা করা হয়। গত বছর করোনা আবহে মন্দিরের দরজা ভক্তবৃন্দদের জন্য বন্ধ থাকলেও এবারে সারারাত খোলা রাখা হবে তারা মায়ের মন্দির। ভক্তবৃন্দদের বিশেষ পুজো দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকছে।
এদিন সকাল থেকেই ভক্ত সমাগম শুরু হয়েছে তারা মায়ের মন্দিরে। পুজোর প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, এদিন ভোরে মা তারাকে অন্যান্য দিনের মতো স্নান করানো হয়। এরপর অষ্টধাতুর মুখাভরন, মুণ্ডমালা, সোনার অলংকার, ফুল, মালা আর শোলা দিয়ে শ্যামা রূপে সাজানো হয়। মায়ের প্রথম পুজোর সময় দেওয়া হয় শীতলা ভোগ। আর পাঁচটা দিনের মতোই এদিনও মায়ের নিত্যভোগ হয়।
সন্ধ্যারতির আগে মা-কে পুনরায় ফুল মালা দিয়ে সাজানো হয়। একদিকে চলে চণ্ডীপাঠ অন্যদিকে চলে পুজো। পুজো শেষে মায়ের আরতির পাশাপাশি দ্বিতীয়বার ভোগ নিবেদন হয়। ভোগে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, মাছ, মাংস, ভাজা, মিষ্টি ও পায়েস। এরই পাশাপাশি মোমবাতি আর মাটির প্রদীপে আলোকিত হয়ে থাকে শ্মশান চত্বর। তারাপিঠে আজকের দিনে লাখ ভক্তের ভিড় জমান। মনস্কামনা পূরণে মা তারার কাছে নিজের সাধ্যমত পুজো দেন দুরদুরান্ত থেকে আসা অগুণিত ভক্ত।
করোনার কারণে গত ২ বছর তারাপিঠে পুজো দেওয়ার ক্ষেত্রে ছিল হাজারো বিধিনিষেধ। এবার করোনার দাপট কমতেই সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মন্দিরের মূল ফটক। কালীপুজোর দিন সকাল জমজমাট বীরভূমের তারাপীঠ মন্দির চত্বর। ভিড় জমাতে শুরু করেছেন ভক্তরা। আলোয় সেজে উঠেছে তারামা-র মন্দির। রীতি মেনে হবে পুজো ৷ আলোর মালায় সেজে উঠেছে গোটা মন্দির ৷
৫১ সতীপীঠের শেষ দুটি পীঠ রয়েছে বীরভূমে। একটি, বোলপুরের কঙ্কালীতলা, আরেকটি নলহাটি। দীপান্বিতা অমাবস্যায় এই দুই মন্দিরে মহা ধূমধামের সঙ্গে কালীপুজো হয়। তারাপিঠের পাশাপাশি কালীপুজোর বিশেষ আয়োজনে সেজে উঠেছে কঙ্কালীতলা।
কালীপুজোর দিন তারা মাকে পঞ্চব্যঞ্জন সহযোগে ভোগ নিবেদন করা হয় ৷ ভোগ হিসেবে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, সাদা ভাত, পাঁচরকম ভাজা, পাঁচ মিশালি তরকারি, মাছ, চাটনি, পায়েস এবং মিষ্টি। এখানকার অন্নভোগের বিশেষত্ব পোড়া শোলমাছ মাখা। দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষ্যে নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে হয় বিশেষ সন্ধ্যারতি৷ এরপর নিবেদন করা হয় লুচি, পায়েস, সুজি দিয়ে শীতল ভোগ।
আরও পড়ুন : < দেবীর নাম কালী কেন, কেন দেবীর পায়ের তলায় মহাদেব? >
দক্ষিণেশ্বর
জনপ্রিয়তার নিরিখে দক্ষিণেশ্বরের কালী পুজো শীর্ষস্থানীয়। সকাল থেকে মন্দিরে ভক্তদের বিরাট লাইন নজরে এসেছে। একটি বার এখানকার মায়ের দর্শন পেতে সারা বছরই ছুটে আসেন প্রচুর সংখ্যক ভক্ত। কালীপুজোর এই বিশেষ দিনে ভিড় যে উপচে পড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দক্ষিণেশ্বরে দেবী পূজিতা হন ভবতারিণী রূপে। দীপান্বিতা কালীপুজোর দিনে এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখার মতো! প্রদীপ ও রঙিন আলোয় কালীপুজোর রাতে যেন আরও মায়াবী হয়ে উঠেছে ভবতারিণীর মন্দির।
ভোরে দেবী ভবতারিণীর বিশেষ আরতি দক্ষিণেশ্বরের পুজোর বিশেষ আকর্ষণ। ঘট স্নানের পর মায়ের পুরনো ঘটেই নতুন করে গঙ্গার জল ভরে প্রতিষ্ঠা করা হয় কালীপুজোর দিন। দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণী ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের দেখানো পথেই পুজো পান। মায়ের ভোগও অতি সাধারণ। ভোগে নিবেদন করা হয় সাদাভাত, ঘি, পাঁচরকমের ভাজা, শুক্তো, তরকারি, পাঁচরকমের মাছের পদ, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অদূরে আদ্যাপীঠ মন্দিরে রয়েছে। সেখানেও কালীপুজোর রাতে আদ্যা মায়ের বিশেষ পুজো হয়। অন্যান্য দিনের মতো সন্ধ্যারতিও হয়েছে। সেই সন্ধ্যারতি দেখতে এবং আদ্যা মায়ের কৃপা পেতে ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য ভক্ত।
কালীঘাট
৫১ সতীপীঠের অন্যতম পীঠ হল কালীঘাট। কালীপুজোর কয়েকদিন আগে থেকেই রঙিন আলোয় সেজে উঠেছে গোটা মন্দির চত্বর। সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আগত বহু ভক্ত কালীঘাট মন্দিরে পুজো ভিড় জমিয়েছেন।
বেগুনভাজা, পটলভাজা, কপি, আলু ও কাঁচকলা ভাজা, ঘিয়ের পোলাও, ঘি ডাল, শুক্তো, শাকভাজা, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস ও চালের পায়েস। তবে রাতে মা লক্ষ্মীকে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয় কালীঘাটে। লুচি, বেগুনভাজা, আলু ভাজা, দুধ, ছানার সন্দেশ আর রাজভোগ থাকে কালীঘাটের ভোগে।
আরও পড়ুন : < কীভাবে জন্ম হল দেবী কালীর, কেন তিনি রক্তপান করেছিলেন? পুজোর নির্ঘণ্ট >
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি
উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির অতি প্রাচীন ও অত্যন্ত জনপ্রিয়। কথিত আছে যে অতীতে ডাকাতদের আক্রমণ থেকে সতর্ক করার জন্য এই মন্দিরের ঘণ্টা বাজিয়ে ঠনঠন শব্দ করা হত। সেই থেকেই এই মন্দিরের নাম ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। প্রতি বছর এই কালীমূর্তিকে নতুন ভাবে সাজানো হয়। তা দেখতে জমায়েত হয় অগণিত ভক্তের। কালীপুজোর রাতে ভোগ দেওয়া হয়, লুচি, পটলভাজা, ধোঁকা বা আলুভাজা, আলুর দম ও মিষ্টি
শ্যামনগর কালীবাড়ি ও নৈহাটির বড়মা
উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর কালীবাড়ির মহিমাও কম নয়। কালীপুজোর দিন সেখানেও বিশেষ পুজো হয়। সকাল থেকেই ভক্তবৃন্দের ঢল নেমেছে শ্যামনগর কালীবাড়িতে। অন্যদিকে শ্যামাপুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নৈহাটির অরবিন্দ রোডের বড়মা। বড়মার মূর্তির উচ্চতা ২১ ফুট। তিনি এখানে দক্ষিণাকালী রূপে পূজিত হন। বড়মা’র পুজো উপলক্ষে সকাল থেকেই সাজো সাজো রব নৈহাটিতে।