''গতবারের তুলনায় এবার অনেক কম,'' কালীপুজোর রাতে টহল দিতে দিতে একথাই বলছিলেন এক পুলিশকর্মী। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া দু'ঘণ্টার সময়সীমার বাইরে শব্দবাজি পোড়ালে যে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেকথা আগাম জানিয়েছিল লালবাজার। শীর্ষ আদালতের সেই নির্দেশ মেনে শব্দবাজি রুখতে এবার অনেকটাই উঠেপড়ে লেগেছিল পুলিশ-প্রশাসন। হলও তাই, গত বছরের তুলনায় শহরবাসীর কানে শব্দবাজির আওয়াজ অনেকটাই কম এল। তবে পুরোপুরি যে সুপ্রিম নির্দেশিকা মানা হয়েছে, সেটাও বলা যায় না। রাত দশটার পরও শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই শোনা গিয়েছে বাজি ফাটানোর শব্দ। আবার এটাও সত্যি, যে 'রাত বাকি বাত বাকি'র মতো ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজি ফাটার শব্দ বাড়েনি, বরং তা কমেছে।
এদিন সন্ধের পর থেকেই টুকটাক বাজি ফাটানোর শব্দ পাচ্ছিল শহর কলকাতা। রাত নটার পর থেকে সেই শব্দ জোরালো হয়। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা রাত আটটা থেকে দশটার মধ্যে সবথেকে বেশি সংখ্যক বাজি পোড়ানো হয়েছে। রাত দশটার পরও সেই বাজি পোড়ানো চলেছে, তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে। রাত বারোটার পর কোথাও কোথাও মাঝে মাঝে বাজি ফাটানোর শব্দ শোনা গিয়েছে, তবে তা নেহাতই কম। অর্থাৎ সুপ্রিম নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সাধারণ মানুষ যেমন অনেকটাই সচেতন হয়েছেন, তেমনই পুলিশ-প্রশাসনও দৃঢ় হাতে তা কার্যকর করেছে।
কালীপুজোর রাত কার্যত যেন পরীক্ষা ছিল লালবাজারের কাছে। তবে রাতের শেষে অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। গত বছরের তুলনায় শব্দবাজির দাপট অনেক কম বলে লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন বিকেল চারটে থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত শব্দবাজি নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ৬৪ টি, যার মধ্যে লাউড স্পিকার সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ৩, গ্রেফতার করা হয়েছে ৬৯ জনকে। গত বছর শব্দবাজি নিয়ে ওই সময়ের ব্যবধানে অভিযোগ জমা পড়েছিল ১২১ টি, যার মধ্যে লাউড স্পিকার সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ৯ টি, গ্রেফতার করা হয়েছিল ১৮৭ জনকে।
আরও পড়ুন: কালীপুজোয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে নামবে কলকাতা পুলিশ
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধিরা রাতভর শহরের রাস্তায় ঘুরে সুপ্রিম নির্দেশিকা অমান্যর বহু নজির নিজেদের চোখেই দেখেন। যেমন:
রাত ১০.১৫: আমহার্স্ট স্ট্রিটে বাজি ফাটার শব্দ
রাত ১০.৩০: ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি এলাকার আশপাশে বাজি ফাটানো হল, চলল আতসবাজির প্রদর্শনও
রাত ১১.১০: গোলপার্কে বাজি ফাটার শব্দ
রাত ১১.৩৫: জি এস বোস রোডে বাজি ফাটার শব্দ
রাত ১১.৪৫: পিকনিক গার্ডেন এলাকায় বাজি ফাটার শব্দ। রাত ১২টার পরও এই এলাকায় অবাধে বাজি ফেটেছে।
রাত ১২.৩০: তিলজলা এলাকায় বাজির শব্দ, আতসবাজির প্রদর্শন
রাত ১.১০: গড়িয়াহাট এলাকায় বাজির শব্দ
এতো গেল শব্দবাজির কথা। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অনেকেই ধন্দে পড়েছেন। রাত ১০টার পরও অনকেই কিন্তু কিন্তু করে রংমশালে আগুন ধরিয়েছেন, কেউ আবার ফুলঝুরি জ্বেলেছেন, আবার কেউ তুবড়ির আলোর স্বাদ নিয়েছেন। অনেক কচিকাঁচারও রাত ১০টার পর তাঁদের অভিভাবককে পাশে নিয়ে ফুলঝুরি, তুবড়ি জ্বালিয়েছে। মাঝরাতে ফুলঝুরি ও তুবড়ি জ্বালাচ্ছিলেন পিকনিক গার্ডেন এলাকার এক বাসিন্দা। তাঁকে দেখে তাঁর এক পড়শি হেসে বলে উঠলেন, "কী ব্যাপার, রাত ১০টা কিন্তু পেরিয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছিল?"
সুপ্রিম নির্দেশ মেনে অনেকেই আবার রাত ১০টার মধ্যেই আলোর উৎসব উদযাপন করেছেন। রাজপথ থেকে গলি, সর্বত্রই চোখে পড়েছে পুলিশি টহলের ছবি। কসবা থানার এক পুলিশকর্মী বললেন, "গতবারের তুলনায় এবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভাল করা হয়েছে।" ওই সাদা উর্দিধারির কথায়, "কোন বাড়ির ছাদে একটা-দুটো ফাটছে, সেটা তো অত দেখা সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।"
আরও পড়ুন: এবার বিধাননগরে বাজেয়াপ্ত আরও নিষিদ্ধ বাজি, ধৃত ২
মোদ্দা কথা, সুপ্রিম নির্দেশ বলবৎ করতে পুলিশ কড়া হয়েছে, কলকাতাবাসীর খানিকটা চেতনা ফিরেছে। তবে পুরোপুরি সুপ্রিম নির্দেশ মেনে নেয় নি এ শহর।
অন্য়দিকে, কালীপুজোর রাতেও বিবেকানন্দ পার্কে বাজি মেলায় শেষ মুহূর্তে বাজি কিনতে ব্য়স্ততা দেখা গিয়েছে। দীপাবলির আনন্দে মাততে অনেকেই এদিন শেষবেলায় ব্য়াগভর্তি বাজি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাই কালীপুজোর রাতের পর এবার পুলিশ-প্রশাসনের সামনে বড় পরীক্ষা আজ। দীপাবলিতে এ শহরে সুপ্রিম নির্দেশিকা কতটা কার্যকর হয়, সেদিকেই এখন সবার নজর।