মফস্বল দিয়েই কি ঘেরা বাকি অনেক শহর, অনেক শহুরে মানুষের মনোভঙ্গি? এ কথা ঠিক সরাসরি রাজনীতি প্রসঙ্গে নয়, কথাটা এল পুজোর উদ্বোধনের সাপেক্ষে। বহরমপুরের এক কালীপুজো, এলাকার সাপেক্ষে এক বৈপ্লবিক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল।
এখনও 'ওদের' পথে ঘাটে দেখলে অনেকেই এক কদম এড়িয়ে চলেন। 'ওদের' পোশাকি নাম রূপান্তরকামী। আর তা যদি শহর ছাড়িয়ে হয় গ্রামে তাহলে তো আর রক্ষা নেই। তবে এক্ষেত্রে কেবল রক্ষা শুধু নয়, তার চেয়েও ঢের বেশি পেল 'ওরা'। যা শুনে অনেকেরই চোখ কপালে উঠেছে। রূপান্তরকামী মানুষদের সমাজের বুকে যথাযথ সমমর্যাদা দিতে এক অভিনব উদ্যোগ নিল মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুর। শহরের অতি পরিচিত বহরমপুর তপোবন কালীপুজো কমিটি তাদের পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন করাল সংখ্যালঘু রূপান্তরকামী শিল্পী তথা সমাজসেবী কাজী আফতাবকে দিয়ে। এই অভিনব ভাবনা প্রসঙ্গে পূজা কমিটির বক্তব্য, "সমাজে কোন মানুষই অচ্ছুত নয়, রূপান্তরকামীরাও এই সমাজের অঙ্গ, তাঁরাও সমান সম্মানের অধিকারী।"
আরও পড়ুন, এবার রূপান্তরকামীর হাত ধরে চোখ মেলে তাকাবেন মা দুগ্গা
ঐতিহাসিক জেলা মুর্শিদাবাদ বরাবরই তার সম্প্রীতি আর ঐতিহ্যের গুণে এগিয়ে থেকেছে। আর তার মধ্যেই আধুনিক মানসিকতার ভাবনা হিসেবে এই কাজ অন্যতম ব্যাতিক্রমী মাইলফলক তৈরি করল তা বলাই যায়।
ছোট শহরে বৈপ্লবিক ঘটনা
সম্প্রতি একটু একটু করে রূপান্তরকামীদের নিয়ে জড়তা কাটাতে এগিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসনও। কিছুদিন আগেই শহর বহরমপুরেই পুরসভা প্রথম এলাকায় রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা শৌচালয় বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে।
খাগড়ার স্থানীয় বাসিন্দা রুবি রায় বলেন, "মানুষকে তার বাহ্যিক পরিচয়ে নয়, তার মনুষ্যত্ব দিয়েই বিচার করা উচিত, এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ না জানিয়ে কোন উপায় নেই।"
বহরমপুর তপোবনের পুজো মণ্ডপের সাজ
রূপান্তরকামী শিল্পী সমাজসেবী কাজী আফতাব, যাঁর হাত দিয়েই তপোবনের প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার কালীপ্রতিমা সমন্বিত পুজোর উদ্বোধন করা হল, তিনি এ ঘটনায় চরম উচ্ছ্বসিত। বললেন, "সত্যি যদি এই ভাবে যদি রূপান্তরকামীরাও সমাজে সমান সম্মান আর ভালোবাসা পায়, তাহলে তার চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না।"
বলার সময়ে তাঁর চোখের কোণ সামান্য ভিজে ওঠে।