চলতি বছরের শুরুতে ডায়মন্ডহারবার মডেল নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে কাজিয়া তুঙ্গে উঠেছিল। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, তার জেরে টুইটযুদ্ধ ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। তৎকালীন তৃণমূল মহাসচিব তথা দলের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির প্রাধান পার্থ চট্টোপাধ্যের হস্তক্ষেপেও সেই বিরোধ মেটেনি। মুখ খুলেছিলেন স্বয়ং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী নিয়ে বিরোধ?
দলের রাশ ক্রমশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে অভিষেকের দিকে যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গেই সেই সময় অভিষেকের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। বলেছিলেন, ‘আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আমি আর কাউকে নেতা মানতে রাজি নই। অভিষেকের নেতৃত্ব প্রমাণিত হয়নি। অভিষেক একজন পদাধিকারী। নেতা মমতাই। ত্রিপুরা, গোয়া জিতিয়ে দাও, মুখ্যমন্ত্রী করে দাও, তবে অভিষেককে নেতা বলে মেনে নেব।’
পাল্টা অভিষেক দাবি করেন, 'কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ওনার নেত্রী মমতা ব্যানার্জী। তাঁকে ছাড়া উনি কাউকে মানেন না। আমিও তো তাই বলছি। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলছেন ঠিক বলছেন। এতে অসুবিধার কী আছে? কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বিরুদ্ধে বলেছেন। এতেই তো প্রমাণিত যে দলে হাইকমান্ড সংস্কৃতি নেই। এটা তো আমাদের জন্য তো ভালোই।'
আরও পড়ুন- ‘মমতা-অভিষেক বিরোধ নেই, হওয়ারও নয়’, কর্মী-সম্মেলনে বড় বার্তা তৃণমূল সুপ্রিমোর
এর বেশ কয়েক মাস পর আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে কল্যাণ ও অভিষেককে একসঙ্গে প্রচারে দেখা গিয়েছিল। পাশাপাশি দাঁড়িয়েও ছিলেন তাঁরা। দলীয় সূত্রে খবর, প্রচারে অবশ্য একে অন্যের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি তৃণমূলের দুই সাংসদ।
কল্যাণ-অভিষেক বিরোধ কী এখনও জারি রয়েছে? বৃহস্পতিবার তৃণমূলের কর্মীসভায় অভিষেকের পরে ও মমতার আগে বক্তব্য রাখেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ও দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। তারপরই মঞ্চে বসা দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'উপস্থিত আছেন আমাদের পুত্রসম পরমপ্রিয় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জী।'
আরও পড়ুন- ‘লেটার হেডে চাকরির সুপারিশ নয়’, বিধায়কদের ‘সাবধান-বাণী’ মমতার
তাহলে কী তৃণমূলের দুই সাংসদের বিরোধ মিটে গিয়েছে? এরকিছুক্ষণ পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর দলে লবি নেই। দলে ঐক্যের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, 'আজকালকার মিডিয়া শুধু তৃণমূলের গন্ধ পেতে ব্যস্ত। ভালোটা চোখে দেখতে পায় না। সারাক্ষণ কুটুস কুটুস। এর সাথে ওর লাগাচ্ছে, এর সাথে আমার লাগাচ্ছে। শতাব্দীর সঙ্গে কেষ্টকে লাগাচ্ছে, আমার সঙ্গে অভিষেকের লাগাচ্ছে। এরাই বোঝে না যে এটা হওয়ার নয় রে। এতে টিআরপি বাড়বে না।'
আরও পড়ুন- ‘বীরের সম্মান দিয়ে ফেরাবেন কেষ্টকে’, দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ মমতার