Advertisment

ভাগাড়ের স্থানান্তর, নতুন ঠিকানা কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে

ভাগাড় কাণ্ডের পর আইনি কড়াকড়ি ও পুলিশি নজরদারিতে পচা জীবজন্তু পাচারের কাজ রাতারাতি বন্ধ হয়েছে, তবে আইনি জটিলতা এড়ানোর জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দু'ধারে রাতের অন্ধকারে এখন নির্দ্বিধায় ফেলা হচ্ছে মৃত পশুদের দেহ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

এভাবেই এক্সপ্রেসওয়ের ধারে পড়ে থাকে মৃত জীবজন্তু

কল্যাণী-দমদম এক্সপ্রেসওয়ের দুই ধার যেন এখন এক ভাগাড়। এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন পঞ্চায়েত থেকে পৌরসভার বিভিন্ন জায়গার আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এই হাইওয়ের দু'ধারে। তবে কলকাতায় ভাগাড় কান্ডের পর থেকে এক্সপ্রেসওয়ের দুধারের আবর্জনার উৎপাত যেন বেড়েই চলছে।

Advertisment

গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো রয়েছে মৃত জীবজন্তুর দেহ। রাতের অন্ধকারে কে বা কারা যে গরু, ছাগল, কুকুর, বেড়াল থেকে শুরু করে যে কোন মৃত জীবজন্তুর দেহ ফেলে দিয়ে যাচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ের ধারে, তা জানা নেই প্রশাসনের। ফেলে যাওয়া সেই মৃতদেহ পচে গিয়ে দুর্গন্ধ বের হয়ে দূষণ ছড়াচ্ছে, হচ্ছে দৃশ্য দূষণও। নিত্যযাত্রীরা নাকে রুমাল চাপা দিয়ে রাস্তা পারাপার করছেন। কাঁচড়াপাড়া থেকে নিমতা দীর্ঘ ৩০ কিমি রাস্তার প্রতিদিনই একই দৃশ্য নজরে পড়ছে তাঁদের। নিত্যযাত্রী শিবু দাসের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে কারা এই পশুদের মৃতদেহ রাস্তায় ফেলে দিয়ে যাচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারছে না প্রশাসন।

publive-image নানা ধরনের বর্জ্য পদার্থ জমা হচ্ছে রাস্তার ধারে

মাস ছয়েক আগে ভাগাড় কান্ডের সূত্রপাত। কলকাতা সহ জেলার বিভিন্ন ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া জীবজন্তুর পচা দেহাবশেষ রাতারাতি উধাও হয়ে যাচ্ছিল। আর সেই পচে যাওয়া দেহাবশেষই পৌঁছে যাচ্ছিল নামিদামী রেস্তোরাঁয়। জেলাগুলির মধ্যে উত্তর ২৪ পরগণার টিটাগড়, কাঁকিনাড়া, জগদ্দলের নাম ছিল সবার উপরে। আইনি কড়াকড়ি ও পুলিশি নজরদারিতে ভাগাড়ে পচা জীবজন্তু পাচারের কাজ রাতারাতি বন্ধ হয়েছে, তবে আইনি জটিলতা এড়ানোর জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দু'ধারে রাতের অন্ধকারে এখন নির্দ্বিধায় ফেলা হচ্ছে মৃত পশুদের দেহ। তবে শুধু জীবজন্তুর পচা মৃতদেহ নয়, এক্সপ্রেসওয়ের ধারে জমতে শুরু করেছে অন্যান্য আবর্জনাও - প্লাস্টিক, ছোট কারখানার বর্জ্য পদার্থ, এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন বাড়িঘরের বর্জ্য পদার্থ, রাস্তা সংলগ্ন দোকানগুলির ফেলে দেওয়া জিনিস, সবই জমা হচ্ছে রাস্তার দু'পাশে।

রাজ্যের ব্যস্ততম হাইওয়েগুলির একটি হওয়ার দরুন প্রচুর হালকা-ভারি যানবাহন প্রতিনিয়ত চলে কল্যাণী থেকে নিমতা সংযোগকারী এই হাইওয়ে দিয়ে। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা আবর্জনা মাঝেমধ্যেই চরম অসুবিধার কারণ হয়ে ওঠে নিত্যযাত্রীদের। পচা গন্ধ যেমন আছে, আবর্জনার স্তূপ থেকে পথচারীদের গায়ে উড়ে আসে নোংরা ও ফেলে দেওয়া খড়-বিচালির দলা। ফলে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতেও অসুবিধে হচ্ছে।

publive-image আবর্জনা সাফ করার ক্ষীণ প্রচেষ্টা

মহকুমা শাসক এ কে ইসলাম জানান, জনসাধারণের সচেতনতার অভাবের ফলেই এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জেলাশাসককে জানানো হয়েছে এবং পুলিশকেও নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। তাঁর কথায়, "এই সমস্যার ফলে আমার পূর্বসূরি একটি পশু কবরস্থান তৈরীর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তবে এখনও সে প্রস্তাব কার্যকরী হয়নি। আমাদের কানে এরকম কোনও খবর এলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি বিডিও ও পঞ্চায়েত প্রধানদের বলে। যে জীবজন্তুর মৃতদেহগুলি এখনো পড়ে আছে, সেগুলিকে সরাতে বলা হয়েছে। পুলিশকে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করতে বলা হয়েছে।"

নরক যন্ত্রণার আরেকটি উৎস হলো, বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং পঞ্চায়েত পুরসভার ফেলা আবর্জনায় ঢাকছে এক্সপ্রেসওয়ে। নিত্যযাত্রী সমর দাস বলেন, "গত দু'মাস ধরে চলছে এই যন্ত্রণা। ভাগাড় কান্ডের পর কেউ আর জীবজন্তুর মৃতদেহ ভাগাড়ে ফেলছে না। সবাই এসে রাস্তার ধারেই ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। কখনো বাসে করে গেলে বাসের মধ্যেই বমি হয়ে যাচ্ছে দুর্গন্ধের চোটে।" নিত্যযাত্রী রফিক আলি জানান, "অনেক সময় বাইকে করে গেলে হাওয়াতেই গায়ে উড়ে আসছে এঁটো থারমোকলের থালা-বাটি। ঘেন্নায় গা ঘিনঘিন করে ওঠে। বমি চলে আসে দুর্গন্ধে। তবুও প্রশাসন নির্বিকার।"

government of west bengal Kolkata Municipal Corporation
Advertisment