আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে - শরৎ এর রোদ ঝলমলে আকাশ, আর এদিকে ওদিকে ঢাকের বাদ্যি জানান দিচ্ছে, পুজো এসে গেছে। দুদিন পরই মহালয়া। আর তারই আগে সেজে উঠছে শহরের নানান প্রান্ত। আগমনী সুর আর মাতৃ আরাধনার ব্যস্ততা তুঙ্গে। দেবীর আগমনের সময় হয়েছে যে - আর তাই এবছর কাশী বোস লেন সর্বজনীনের বিশেষ নিবেদন মা।
বরাবরই আধুনিকতার সঙ্গে সাবেকিয়ানাকে মিলিয়ে দেন উত্তর কলকাতার এই পুজো। এবছর ৮৫ বছরে পদার্পণ, ব্যস্ততা তুঙ্গে। দিনরাত এক করে চলছে কাজ। প্রচণ্ড উত্তেজনা পুজোর সঙ্গে জড়িত সকলের মধ্যেই। শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি বলে কথা। প্যান্ডেল থেকে দেবীমূর্তি - তুলির শেষ টান ছোঁয়াচ্ছেন শিল্পী। পুজোর বিশেষ থিমে জড়িয়ে আছেন, মা তথা মৃত্তিকা অথবা মাটি। মাটি ছাড়া যে কিছুই সম্ভব নয়। এই মাটিই সবকিছু দেয়। তাই তাকে ছাড়া পুজো একেবারেই বৃথা।
পুজোর সাধারণ সম্পাদক সোমেন দত্তর হাজার ব্যস্ততার পরেও কথোপকথনে তুলে ধরলেন সবটাই। বললেন, পৃথিবীর তিন ভাগ জল এবং এক ভাগ স্থলের বেশিরভাগটাই মাটি। খাদ্য কিংবা অক্সিজেন এই মাটি ছাড়া আর কিই বা আছে। পুজোর মূল উদ্দেশ্য মানুষকে মাটি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। সেই বহুযুগ আগে শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসের অমূল্য বাণী টাকা মাটি মাটি টাকা - বাস্তবের জীবনে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে এ বলাই যায়। মাটি মানুষকে খাদ্য যোগায়, বেচেঁ থাকার শক্তি দেয়।
আরও পড়ুন < তাক লাগানো কাজ, এবার পুজোয় নজর কাড়বে পাটের দুর্গা, শিল্পীর ছোঁয়ায় রুগ্ন শিল্প বাঁচানোর দাবি >
মাটিকে মা বলে ডাকার কারণ, সে সবাইকে আগলে রাখে। তার ওপরেই হাজার সৃষ্টি, ফলন - উৎপাদন, আরও কত কী! পুজোর ভাবনায় রয়েছেন অদিতি চক্রবর্তী এবং মাতৃমূর্তির ভাবনায় নৃপেণ মন্ডল। তবে, এবারের কাশী বোস লেনের পুজোয় রয়েছে চমক। মণ্ডপসজ্জায় যা যা ব্যবহার করা হয়েছে সবই পরিবেশ বান্ধব। যেহেতু মাটি জড়িয়ে রয়েছে এই পুজোর সঙ্গে তাই তার বিশেষ উল্লেখও করলেন সোমেন বাবু। তার কথায়, মল্লারপুর নামক গ্রামে যেখানে হাতে গুনে কয়েকজন আদিবাসীদের বসবাস সেখানেই রয়েছে অজানা সম্পদ। মাটির রং সম্পর্কে অনেকেই জানেন, লাল মাটি কিংবা কাদা মাটি। তবে এই গ্রামে যতই মাটি খুঁড়তে থাকুন না কেন তাতে ভিন্ন রং পাওয়া যায়, সাদা কিংবা নীল, ধূসর রঙের দেখাও মেলে।
সেইসব মাটি দিয়ে এবছর প্রথম পুজোর মণ্ডপ সজ্জা করেছেন কাশী বোস লেন। মাটির মানুষদের তুলে ধরতেও এই ভাবনাকে রূপ দেওয়া হয়েছে। প্রতিমাই রয়েছে সাবেকি সাজ সঙ্গেই আধুনিকতার ছোঁয়া। পুজোর বিশেষ নিয়মের উল্লেখ করেই এক সদস্য বলেন, এই পুজোয় ছাপ্পান্ন রকমের ভোগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তের টাচ, মণ্ডপের গায়ে চলছে আঁকিবুকি। যদিও এলাকার মানুষদের এর তর সইছে না। পুজোর আর ক-দিন?