কিশোরের পায়ের জানু এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গিয়ে আটকে ছিল বড় লোহার রড। জটিল অস্ত্রোপচার করে কিশোরের পা থেকে সেই রড বের করলেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক সন্দীপ বাড়ী। এই অস্ত্রোপচারে তাঁকে সাহায্য করেন ওটি বিভাগের কর্মী কাজল দাস। সফল অস্ত্রোপচারের পর বছর ষোলো বয়সী কিশোর অভিজিৎ মাঝি এখন বিপদন্মুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এত বড় জটিল অস্ত্রোপচার কাটোয়া হাসপাতালের ওটিতেই চিকিৎসকরা করে ফেলায় আপ্লুত কিশোরের পরিবার। এর জন্য কিশোরের পরিবার কাটোয়া হাসপাতালের চিকিৎসকদের কৃতজ্ঞতা জানানোর কোন খামতি রাখেননি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে,কিশোর অভিজিৎ মাঝির বাড়ি কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের নৈহাটি গ্রামের উত্তরপাড়ায়। তাঁর বাবা ছোটন মাঝি কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন । ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন ছোটনবাবুর স্ত্রী দিপালী মাঝি। কিশোরের বাম পায়ে ১০ মিলিমিটার পুরু ও ৬২ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের লোহার রড ঢুকে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে শনিবার রাত প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ ।
এলাকাবাসী ও পরিবার সদস্যরা জানিয়েছেন, নৈহাটি গ্রামে যাতায়াতের রাস্তায় একটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে। তার জন্য ঢালাইয়ের আগে সেখানে লোহার রডের খাঁচা বেঁধে রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য ঠিক তার পাশ দিয়ে বাঁশ দিয়ে একটি সরু সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতে গ্রামের ক্লাবে ক্যারম খেলার পর কিশোর অভিজিৎ ওই সাঁকোর উপর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে আসছিল। তখনই টাল সামলাতে না পেরে অভিজিৎ বাঁশের সাঁকো থেকে কালভার্ট তৈরির জন্য বেঁধে রাখা লোহার খাঁচার উপরে পড়ে যায়।
আরও পড়ুন নাম ভাঁড়িয়ে হাসপাতালে, সদ্যোজাতকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা মায়ের
ওই সময়েই একটি বড় লোহার রড অভিজিৎতের বাঁ পায়ের জানু এফোঁড় ওফোঁড় করে ঢুকে গিয়ে আটকে থাকে। ওই অবস্থাতেই কিশোর বেশ কিছুক্ষণ সেখানে পড়ে থাকে। এক গ্রামবাসীর বিষয়টি নজরে পড়ে। তৎক্ষনাৎ তিনি গ্রামে এসে বিষয়টি জানান। তারপর রড কেটে কিশোরকে রক্তাক্ত অবস্থায় কিশোরকে উদ্ধার করে তারা কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন।
চিকিৎসক সন্দীপ কুমার বাড়ী এদিন জানিয়েছেন, “কিশোরকে দ্রুত হাসপাতালে আনা হয়েছিল বলেই বড় বিপদ থেকে রেহাই মিলেছে। বেশি দেরি হলে তার প্রাণহানি পর্যন্ত হতে পারত “। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক সৌভিক আলম বলেন, “হাসপাতালে পুরুষ বিভাগে রেখে এখন ওই কিশোরের চিকিৎসা চলছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে“। অভিজিতের মা দিপালীদেবী এদিন বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। আমাদের অত সামর্থ্য নেই । তেমনটা হলে ছেলেকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ধার-দেনা করতে হত। কিন্তু কাটোয়া হাসপাতালেই যে এত বড় অপারেশন হবে তা আশা করিনি। কাটোয়া হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।“