/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/02/cats-2025-10-02-10-36-39.jpg)
দুর্গা মন্দিরে দুঃসাহসিক চুরি
মহানবমীর ভোর রাতে ভয়ঙ্কর কাণ্ড। কেতুগ্রাম, কাটোয়ায় দুর্গা মন্দিরে দুঃসাহসিক চুরি। দেবীর পরণে থাকা সোনা ও রুপোর সমস্ত অলংকার নিয়ে চম্পট দুস্কৃতিদের।
অসুর নাসিনী দেবী দুর্গাকেও রেহাই দিল না দুস্কৃতিরা। মহানবমীর ভোর রাতে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার রাজুর গ্রামের বড়াল পরিবারের প্রচীন মন্দিরে দুস্কৃতিরা হানা দেয়। একাধিক দরজার তালা ভেঙে মন্দিরের ভিতরে ঢুকে দুর্গা প্রতিমার পরণে থাকা সোনা ও রুপোর সমস্ত অলংকার চুরি করেনিয়ে দুস্কৃতিরা পালিয়ে যায়।
সেই রাতে কাটোয়া থানার গোশুম্বা গ্রামের মন্দির থেকেও দুর্গা প্রতিমার মুকুট সহ অলংকার চুরির ঘটনা ঘটেছে। কেতুগ্রাম ও কাটোয়া থানার পুলিশ মন্দিরে চুরির ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও দুস্কৃতির গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পাওয়া যায় নি। কেতুগ্রামের রাজুর গ্রামের বড়াল পরিবারের মন্দিরটি প্রায় ৫০০ বছরের পুরানো। সেই মন্দিরে প্রায় ৪৮৩ বছর ধরে হয়ে আসছে দুর্গা পুজো। দৌহিত্র বংশ বটব্যাল ও মুখোপাধ্যায় পরিবার মিলে এখন বাৎসরিক দুর্গা পুজো পরিচালনা করেন। পরিবারের সদস্যরা সকলেই বাইরে থাকেন । তবে শারদোৎসবের সময় সকলেই গ্রামে এসে জড়ো হন।
পরিবার সদস্যদের কথায় জানা গিয়েছে,“তাঁদের পরিবারের দেবী দুর্গার পরণে প্রায় ৬ ভরি সোনার গহনা ছিল । এছাড়া দেবীর পায়ে পরানো ছিল রুপোর দামি মল সহ অন্য অলংকার। প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে সেইসব গহনা দেবীর গা থেকে খুলে নিয়ে পিতলের বাক্সে ভরে সেগুলি কলকাতায় বসবাসকারী এক শরিকের কাছে রেখে দেওয়া হয়৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এবছর প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে নবমীর ভোরেই দুস্কৃতিরা দেবীর সব অলংকার চুরি করে নিয়ে পালিয়েছে'।এই চুরি নিয়ে কেতুগ্রাম থানার পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে বড়াল পরিবারের বর্ষিয়ান সদস্য তপন বটব্যাল ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি জানান, তাঁদের মন্দিরে চুরির ঘটনা নিয়ে তিনি কেতুগ্রাম থানায় কোন অভিযোগ জানাবেন না। যা জানানোর তা তিনি সরাসরি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে লিখে জানাবেন বলে জানান।
তপন বটব্যাল এদিন আরও জানান, “মহালয়ার পর থেকেই সরকারি প্রচারের হোর্ডিং খরচ বাবদ ৩,২০০ টাকা এবং সিসিটিভি লাগানোর জন্য নগদ ৩,৫০০ টাকা দেওয়ার জন্য তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছিল কেতুগ্রাম থানার পুলিশ। সেই টাকা আদায় করতে লাগানো হয় থানার দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকে । কিন্তু তাঁরা টাকা দিতে অস্বীকার করেন । এজন্য ওই দুই সিভিক ভলান্টিয়ার সাফ জানিয়ে দেয় যে পুজোর সময় তাঁদের মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেতুগ্রাম থানার পুলিশ নিতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত দেবীর পরণে থাকা সোনা ও রুপোর সব আলংকার চুরিই হয়ে গেল'। বড়াল পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী পুজোর দিনে দেবীর শরীর স্পর্শ করা নিষেধ । কিন্তু চোরের দল দেবীকে স্পর্শ করেছে বলে বুধবার ফের নতুন করে ঘট এনে পুজো শুরু করা হয়।
যদিও কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (SDPO) কাশীনাথ মিস্ত্রি জানিয়েছেন, ঘটনার কথা শুনেছি। তবে কোন অভিযোগ এখনও থানায় জমা পড়েনি। তিনি এও জানান ,“সর্বজনীন পুজো কমিটিগুলিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কথা বলা হয়েছিল।ওটা পারিবারিক পুজো। যেহেতু ওনাদের (বড়াল পরিবারের)পুজোর সময় প্রতিমাকে দামি অলঙ্কার পরানো হয় তাই সিসিটিভি লাগানোর জন্য ওনাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছি। কিন্তু ওনারা তাতে রাজি হননি“।
একই রাতে কাটোয়া থানা এলাকার গোশুম্বা গ্রামের দত্তবাড়ির দুর্গা মন্দিরেও একই কায়দায় আঁকশি ব্যবহার করে প্রতিমার মুকুটসহ অলঙ্কার চুরি হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।মন্দিরে চুরির ঘটনা নিয়ে কেতুগ্রাম ও কাটোয়ার বাসিন্দা মহলে যথেষ্টই আতঙ্ক ছড়িয়েছে।